ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী সাদমান সাকিব টেক জায়ান্ট গুগলে চাকরি পেয়েছেন। চলতি বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের শুরু দিকে গুগলের তাইওয়ান শাখার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগদান করবেন তিনি।

সাদমান সাকিব ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সাদমানের গ্রামের বাড়ি নরসিংদী। তার স্কুল জীবন কাটে ঢাকার মনিপুর স্কুলে। উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন নটর ডেম কলেজ থেকে। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করেন ২০১৯ সালে। বর্তমানে তিনি পেন্টা গ্লোবাল লিমিটেডে সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত আছেন। সাদমান সাকিব এর গুগলে চাকরি পাওয়ার গল্প লিখেছেন ঢাকা পোস্টের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক মাহমুদ তানজীদ

ঢাকা পোস্ট : গুগলে চাকরি পেয়েছেন। দারুণ খবর। এজন্য কিভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন?

সাদমান সাকিব : বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেই নিয়মিত প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিতাম। ৩ বছরের বেশি সময় নিয়মিত প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। বলতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পুরো সময়টাই প্রবলেম সলভিংয়ে ব্যয় করেছি। এরপর চাকরি জীবনে প্রবেশের পর টেক জায়ান্টগুলোতে ইন্টারভিউর জন্যে ক্রাকিং দ্য কোডিং ইন্টারভিউ বইটি পড়েছি, লিডকোডে নিয়মিত কনটেস্ট করেছি এবং প্রবলেম সলভ করেছি প্রায় ২ বছর। এগুলো আমাকে গুগলে চাকরি পেতে সাহায্য করেছে।

ঢাকা পোস্ট : গুগলের ভাইভা পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাই-

সাদমান সাকিব : গুগলে দুই স্টেপে ইন্টারভিউ নেওয়া হয়। প্রথমে ৪৫ মিনিটের একটা টেকনিক্যাল রাউন্ড (প্রোগ্রামিং সমস্যা সমাধান) হয়। আমি গুগলে আবেদন করি চলতি বছরের মার্চ মাসে। এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রথম ইন্টারভিউ সম্পন্ন হয়। এটাকে ফোন ইন্টারভিউ বলা হয়। ৪৫ মিনিটের এই ইন্টারভিউ হয় গুগল মিটে। এতে প্রশ্নকর্তা বিভিন্ন প্রশ্ন করেন এবং আমাকে গুগল ডকে সে অনুসারে প্রোগ্রামিং সমস্যার সমাধান লিখতে হয়েছে। সাধারণত ১টি বা ২টি সমস্যা সমাধান করতে হয়। এ ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি সমস্যাটি কীভাবে সমাধান করা হয়েছে সে সম্পর্কে প্রশ্নকর্তাকে ভালোভাবে বুঝানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমার ইন্টারভিউতে ২টি সমস্যা ছিলো। ১৫ মিনিট বাকি থাকতেই আমি ২টি সমস্যার পূর্ণ সমাধান করেছি। শেষের ১৫ মিনিট প্রশ্নকর্তার কাছ থেকে গুগল সম্পর্কে কিছু জানার চেষ্টা করি। 

দ্বিতীয়ত, ভার্চুয়ালি অনসাইট রাউন্ড হয়। সেখানে মোট ৪ থেকে ৫টি আলাদা টেকনিক্যাল রাউন্ড হয়। দু'টি রাউন্ডই নক-আউট রাউন্ড। মে মাসের শেষের দিকে আমার ফাইনাল রাউন্ড (অনসাইট) অনুষ্ঠিত হয়। করোনার কারণে সবকিছু ভার্চুয়ালি নেওয়া হয়েছে। এখানেও টেলিফোন রাউন্ডের মতো হুবুহু আরও ৩টি রাউন্ড হয়। কিন্তু প্রোগ্রামিং সমস্যাগুলো তুলনামূলক কঠিন থাকে। এরমধ্যে একটি বিহেভিয়ার রাউন্ডও হয়। এখানে আমার লিডারশীপ স্কিল যাচাই করা হয়।

জুলাই মাসে জানানো হয় ইন্টারভিউ রাউন্ডের ইম্প্রেশন পজিটিভ। তারা সামনে আগাতে চাচ্ছে। তারপর কিছু টিম ফিট মিটিং হয়। এর মধ্যে থেকে আমি গুগল ক্রোম ওএস টিমকে বেছে নিই। তারপর আগস্টের প্রথম সপ্তাহে অফার লেটার পাই গুগল তাইওয়ান শাখা থেকে।

ঢাকা পোস্ট : গুগলে যেকোনো বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্যই কি চাকরির সুযোগ রয়েছে?

সাদমান সাকিব : গুগল তেমন একটা ডিসিপ্লিন দেখে না। ওদের জব ডিস্ক্রিপশনে যদি আপনার নলেজগুলো ম্যাচ করে, আপনি এপ্লাই করতে পারবেন।

ঢাকা পোস্ট : গুগলে আপনার কাজের ক্ষেত্র কী?

সাদমান সাকিব : গুগলের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম ‘ক্রোম ওএস’ এর সিকিউরিটি টিমে কাজ করবো।

ঢাকা পোস্ট : গুগলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহ জুগিয়েছে দিয়েছে কে?

সাদমান সাকিব : সবসময় উৎসাহ জুগিয়েছে আমার পরিবারের সদস্যরা। বিশেষ করে আমার বাবা। আমার ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র ভাই এবং আমার বন্ধুরাও আমাকে সবসময় সাপোর্ট দিয়েছে।

ঢাকা পোস্ট : প্রোগ্রামিং নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

সাদমান সাকিব : আপাতত কোনো পরিকল্পনা করিনি। এমনিতে কয়েক বছর ধরে শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রামিংয়ের ব্যাপারে উৎসাহ জোগানোর কাজ করছি এবং ট্রেনিং করাচ্ছি।

ঢাকা পোস্ট : আপনি গুগলে কতবার আবেদন করার পরে চাকরি পেয়েছেন?

সাদমান সাকিব : আমি গুগলে মোট ৩ বার আবেদন করেছি। এর আগে আরও দুইবার আবেদন করেছিলাম, তখন আমার সিভি নির্বাচিত হয়নি। তৃতীয়বারে এসে চাকরি পেলাম।

ঢাকা পোস্ট : গুগল বা আইটি ইন্ডাস্ট্রির চাকরি পেতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আপনার কী পরামর্শ রয়েছে?

সাদমান সাকিব : বেশি বেশি প্রোগ্রামিং প্রবলেম সমাধান করায় মনোযোগী হতে হবে। বিশেষ করে প্রতিটি বিষয়ে ক্লিয়ার কনসেপ্ট থাকাটা জরুরি। একই সঙ্গে বেশি বেশি প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হবে।