যেকোনো চাকরি পাওয়ার সবশেষ ধাপ হলো ভাইভা পরীক্ষা। তবে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির ভাইভা পরীক্ষার ধরনে পার্থক্য থাকায় প্রস্তুতির বিষয়টিও আলাদা।

মূলত একজন প্রার্থী বিসিএস ও পিএসসির প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় পাস করার পর ভাইভা পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন।

সাধারণত নিয়োগ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভাইভার জন্য শূন্য পদের চেয়ে ৩-৫ গুণ বেশি প্রার্থীকে নির্বাচিত করে। তবে কোন কোন প্রতিষ্ঠানে যারা লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে, তারা সবাই ভাইভা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন।

কার্যতই সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভাইভা পরীক্ষার জন্য কমন টপিক নিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি পোশাকের ব্যাপারেও সচেতন হতে হবে। এসব নিয়েই আজকের আয়োজন-

যেভাবে পড়াশোনা করবেন

১। নিজের সম্পর্কে, নিজের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, নিজ জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং একাডেমিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে নোট তৈরি করতে হবে।

এ ক্ষেত্রে নিজের নামের সঙ্গে কোন বিখ্যাত মানুষের নামের মিল থাকলে সে সম্পর্কে জানতে হবে। তবে ভাইভায় নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে, গুরুত্ব দিতে হবে ক্যারিয়ার সংক্রান্ত বিষয়। এছাড়াও নিজের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিখ্যাত মানুষ থাকলে তাদের সম্পর্কেও জানতে হবে।

২। সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, সাম্প্রতিক ঘটনাবলি, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া আলোচিত বিষয় সম্পর্কে আপ টু ডেট থাকতে হবে। এ সংক্রান্ত বেশ কিছু বই বাজারে পাওয়া যায়। সেগুলো সংগ্রহ করে প্র্যাকটিস করতে হবে।

৩। বিসিএস পরীক্ষার থেকে প্রার্থীর পছন্দসই ক্যাডেট সম্পর্কে বিস্তারিত জানাশোনা থাকতে হবে। বিশেষ করে নির্বাচিত ক্যাডেট কোন মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করবে, ট্রেনিং, পোস্টিং ও দায়-দায়িত্ব সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে। পাশাপাশি স্নাতকের সাবজেক্টের সঙ্গে পছন্দের ক্যাডেট কতটা সম্পৃক্ত সে সম্পর্কেও বিষদ জানাশোনা থাকতে হবে। এ জন্য নিয়মিত অনুশীলনের বিকল্প নেই।

বিসিএস ছাড়া সরকারি অন্যান্য চাকরির ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। উদাহরণ হিসেবে ধরুন আপনি দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক পদে ভাইভা দিবেন। সে ক্ষেত্রে আপনাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যক্রম, প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস, এ সংক্রান্ত আইন, দুর্নীতির সংজ্ঞা, ধরণ ও আন্তর্জাতিক দুর্নীতি দমন কমিশন সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।

ভাইভায় যেমন পোশাক পড়বেন

কথায় আছে, আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী। ভাইভা পরীক্ষার ক্ষেত্রে এ কথাটি বেশ প্রযোজ্য। তাই প্রার্থীকে এমন একটি পোশাক বাছাই করতে হবে, যাতে তাকে অফিসিয়াল লুকে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে সাদা শার্টের সঙ্গে কালো প্যান্ট পড়তে হবে। এছাড়াও লাইট কালারের শার্ট ও ডার্ক কালারের প্যান্টও পরিধানযোগ্য।

মনোযোগী হতে হবে জুতার ক্ষেত্রেও। যদিও ফর্মাল ড্রেসের সঙ্গে টাই পড়বেন কিনা, এ সংক্রান্ত কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। তবে ফর্মাল ড্রেসের সঙ্গে টাই পড়লে মন্দ হয় না। এতে গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়ে।

ভাইভা পরীক্ষার সাধারণ কিছু নিয়ম-নীতি

সরকারি চাকরির ভাইভায় একজন প্রার্থীকে অবশ্যই নমনীয়তা ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হবে। এছাড়াও এখানে কিছু কৌশল মেনে চললে অনেকের থেকেই এগিয়ে থাকবেন-

১। প্রশ্ন যদি বাংলায় হয়, তো বাংলায় উত্তর দিবেন। ইংরেজিতে হলে ইংরেজিতে উত্তর দিবেন। এর মধ্যদিয়ে আপনার সক্ষমতা প্রকাশ পাবে। ইংরেজি প্রশ্নের বাংলায় উত্তর আপনার সক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। ভাইভা পরীক্ষায় এ বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ফলে বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষায় কথা বলার প্রস্তুতি নিতে হবে।

২। আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে- প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মধ্যদিয়ে ইতিমধ্যেই আপনি নিজের মেধার সক্ষমতার প্রমাণ করেছেন। সুতরাং ভাইভা পরীক্ষায় নতুন করে আপনার মেধা পরীক্ষা করা হবে না। প্রশ্নকর্তারা ভাইভা পরীক্ষা আপনি কতটা অফিসার ফ্রেন্ডলি, সে বিষয়টি খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে। সুতরাং প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় নমনীয়তা বজায় রাখতে হবে।