বিসিএস প্রিলিমিনারিতে ভালো করার মূলমন্ত্র
প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় টিকতে চাই জোর প্রস্তুতি। সেই পরীক্ষাটি যদি হয় বিসিএস, তবে তো কথাই নেই। এবারের ৪১তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ১৯ মার্চ হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। করোনার কারণে দেশের ৮টি বিভাগীয় শহরে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশ নিবে ৪ লাখ ৭৫ জন পরীক্ষার্থী।
পিএসসির নীতি নির্ধারকদের তথ্য মতে প্রার্থীদের হাতে আছে বড়জোড় দুই মাস। এই সময়টা ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারলে প্রিলিমিনারিতে টিকে যেতে পারেন। জানেন নিশ্চয়ই, সবচেয়ে বেশি প্রার্থী ছিটকে পড়ে এই প্রিলিমিনারি পর্ব থেকেই!
বিজ্ঞাপন
প্রশ্ন সমাধানে পটু হতে হবে
একাধিক জব সলিউশন সংগ্রহ করে নিন। সর্বশেষ বিসিএস পর্যন্ত সব প্রশ্ন সলভ করে ফেলুন। পিএসসির নন-ক্যাডার পরীক্ষার প্রশ্নগুলোও বুঝেশুনে সলভ করুন। নিয়ম করে পড়তে হবে দৈনিক পত্রিকা। ইন্টারনেটে চোখ রাখতে হবে, জানতে হবে আপডেট তথ্য। হাতে সময় কম। টপিক নির্বাচনে সতর্ক হোন। প্রশ্ন ঘাঁটাঘাঁটি করলে নিজেই বুঝতে পারবেন অপ্রয়োজনীয় টপিক কোনগুলো।
বিজ্ঞাপন
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে জোর দিতে হবে
ব্যাকরণ অংশের সিলেবাস ও বিগত বছরের প্রশ্ন দেখে বইয়ের অধ্যায়গুলো দাগিয়ে বারবার পড়ুন। সাহিত্য অংশে বিগত বছরের প্রিলিমিনারি আর লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস স্টাডি করে কোন ধরনের প্রশ্ন আসে, কোন ধরনের প্রশ্ন আসে না, সে সম্পর্কে ভালো ধারণা নিন।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস ও বিবর্তন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমার্থক শব্দ, বিপরীতার্থক শব্দ, বাগধারা, এককথায় প্রকাশ ও পরিভাষা-এ রকম কিছু টপিক থেকে প্রতিবছরই প্রশ্ন আসে।
ফাঁকি দেওয়া যাবে না ইংরেজিতে
ভালো মানের Grammar বই থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। বেশির ভাগ পরীক্ষার্থীর ভীতির জায়গা vocabulary বারবার চর্চা করলে এ অংশে ভালো করা সম্ভব। প্রতিদিন ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতা বুঝে বুঝে পড়তে হবে। নতুন শেখা শব্দগুলো দিয়ে ছোট ছোট বাক্য লেখার চর্চা করলে কাজে দেবে।
Literature অংশে ইংরেজি সাহিত্যের খ্যাতিমান সাহিত্যিকদের Prominent Work -গুলো পড়তে হবে।
গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা থাকা চাই
ভালো করার মূলমন্ত্র অনুশীলন। গণিতে সাধারণত প্রশ্ন কমন পড়ে না। খুব বেশি পটু না হলে নির্দিষ্ট সময়ে অন্য বিষয়গুলো কাভার করে গণিতের সব প্রশ্নের উত্তর করা কঠিন। তাই আয়ত্ত করতে হবে কম সময়ে গণিতের সমাধান করার কৌশল। এ ক্ষেত্রে নিয়মিত অনুশীলনের অভ্যাস কাজে দেবে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সাধারণত এমন সব অঙ্কই থাকে, যা শর্টকাটে সমাধান করা যায়।
মানসিক দক্ষতায় বুদ্ধিবৃত্তিক প্রশ্ন করা হয়। কমনসেন্স, বিচারবুদ্ধি কাজে লাগালেই এ অংশে ভালো করা যাবে। আইকিউ টেস্টের বই প্রস্তুতিতে কাজে আসবে। অনেক ওয়েবসাইট আছে, যাতে আইকিউ টেস্ট থাকে।
দৈনন্দিন বিজ্ঞানে জানাশোনা থাকতে হবে
বিজ্ঞানের প্রশ্ন এমনভাবে সেট করা হয়, যাতে যেকোনো ব্যাকগ্রাউন্ডের প্রার্থীরই সমান সুযোগ থাকে। এ বিষয়ে ভালো করার জন্য কী পরিবর্তন হচ্ছে, নতুন কী আবিষ্কার হচ্ছে, কী ঘটছে-এসব ঘটনা জানতে হবে। পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, চিকিত্সাবিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার ও আবিষ্কারকের নাম জানতে হবে। নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ বিজ্ঞান বোর্ড বই ভালোভাবে পড়তে হবে।
কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তিতে আপডেট থাকতে হবে
প্রাথমিক ধারণাভিত্তিক প্রশ্ন আসে। সাধারণত এর ব্যতিক্রম হয় না। তাই চিন্তার কিছু নেই। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কম্পিউটার শিক্ষা বইগুলো ভালোমতো পড়লে প্রিলিমিনারির জন্য বাড়তি তেমন কিছু না পড়লেও চলে। বাজারে কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে অনেক বই পাওয়া যায়। বাড়তি প্রস্তুতির জন্য এসব বই দেখতে পারেন।
সাধারণ জ্ঞানে জোড় দিতে হবে
নিয়মিত চোখ রাখুন খবরের কাগজ ও ইন্টারনেটে। কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, কারেন্ট ওয়ার্ল্ড প্রভৃতি সাধারণ জ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী প্রস্তুতিতে সহায়ক হতে পারে। বিসিএসের আগে এসব মাসিক পত্রিকা বিশেষ সংখ্যাও বের করে। প্রস্তুতিতে ইন্টারনেট হতে পারে সহায়ক। গুগলে ইংরেজিতে কিংবা ইউনিকোড বা অভ্রতে বাংলায় টাইপ করে গুগলে সার্চ করে পড়তে পারেন।
নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন
নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন বিষয়টি মজার। এখানে জানা বিষয়গুলো থেকেই প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা বেশি। উত্তর করার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার হবে কমনসেন্স। একটুখানি মাথা খাটালেই উত্তর বের করা সম্ভব। সিলেবাসের টপিকসংশ্লিষ্ট অনেক লেখা ইন্টারনেটে পেয়ে যাবেন। বিগত পরীক্ষার প্রশ্ন থেকে কমন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
মাধ্যমিক ভূগোল পড়লে কাজে দেবে। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের সংশ্লিষ্ট অধ্যায় থেকেও প্রস্তুতি নিতে পারেন। নবম-দশম শ্রেণির বইয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক অধ্যায়টি ভালো করে পড়তে হবে। পড়তে পারেন অনার্স পর্যায়ের বইও।
নির্দিষ্ট একটি লক্ষ মনে ধারন করতে হবে
বিসিএসের প্রস্তুতির জন্য মাইন্ডসেট অনেক গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষ্যটা স্থির করতে হবে, সে অনুযায়ী চেষ্টা করে যেতে হবে। প্রস্তুতি যত ভালো হবে, পরীক্ষায় টেকার সম্ভাবনাও ততটাই বাড়বে। একটা কাগজে লিখে ফেলুন, আপনি কোন কোন টপিকে দক্ষ। লিখে ফেলুন দুর্বলতার জায়গাগুলোও। এবার পরিকল্পনা করুন, কিভাবে দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারেন। বিসিএস পরীক্ষায় ভালো করতে মেধা ও বুদ্ধিমত্তার চেয়ে পরিশ্রমের মূল্য বেশি। সব বিষয়েরই বেসিক ভালোভাবে জানতে হবে। এ ক্ষেত্রে যে যত বেশি জেনে নিতে পারবে, প্রতিযোগিতায় সে তত বেশি এগিয়ে থাকবে।