সানজিদা শারমিন তন্বী। জেলে ও মাছ চাষিদের থেকে ন্যায্য মূল্যে মাছ সংগ্রহ ও গুনগত মান ঠিক রেখে সারা দেশে পৌঁছে দিচ্ছে তার প্রতিষ্ঠান ফুড নেটওয়ার্ক এগ্রো লিমিটেড। এককথায় উৎপাদক ও চূড়ান্ত ভোক্তার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরির কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি ঢাকা পোস্টের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি।

পথ চলা শুরু যেভাবে

আমার শশুর বাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগরে। প্রথমবার বেড়াতে গিয়ে সুন্দরবনের মাছের স্বাদ পাই। আসার সময়ে আত্মীয়দের জন্য মাছ এনেছিলাম। সে মাছ খেয়ে এতো খুশি হয়েছিল, আমাকে বেশ কয়েকবার সাতক্ষীরা থেকে মাছ এনে তাদের দিতে হয়েছিল। এরপর  প্রধানমন্ত্রীর অফিসের অধীন বিডাতে একটি প্রশিক্ষণ প্রকল্পে অংশ নিই। পরবর্তীতে সেখানে থেকেই গড়ে ওঠে ব্যবসায়িক ভাবনা। সুন্দরবনের জেলেরা তাদের মাছের সঠিক দাম পায় না। আমরা সেটি নিয়েও কাজ করতে চেয়েছিলাম। এছাড়া সুন্দরবনের মাড ক্র্যাব বা কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি হয়। বিশেষ করে সফট সেল কাঁকড়া। যা বাংলাদেশের বাজারে সহজলভ্য ছিল না। আমরা সফট সেল কাঁকড়ার বাজারজাত করণের পাশাপাশি বাংলাদেশে প্রথমবারের মত ভ্যালু অ্যাড করে রেডি টু ফ্রাই কাঁকড়া নিয়ে আসি। সব কিছু মিলিয়েই আমাদের পথ চলা শুরু।

গুণগত মানে ছাড় দিচ্ছি না

কাঁকড়া নিয়ে মানুষের ভ্রান্ত ধারণা আছে। বাংলাদেশের সোশ্যাল স্টিগমারের কারণে এর মার্কেটিং সহজ ছিল না। একই সঙ্গে হার্ড সেল বা শক্ত খোলসের কাঁকড়া ও সফট সেল কাঁকড়া এই দুটির পার্থক্য বোঝাতে সময় লেগেছে। পণ্য পরিবহন-মান নিয়ন্ত্রণ ও মূলধন নিয়ে জটিলতায় পড়তে হয়েছে আমাদের। তবে সব প্রতিকূলতাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে এখন পর্যন্ত এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। পণ্যের গুনগত মানে কোন ধরনের ছাড় দিচ্ছিনা। 

বাংলাদেশে আমরাই প্রথম

সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জে আমাদের ফিল্ড অফিস আছে। যেখানে সফট সেল কাঁকড়ার ইনডোর ফার্মিংয়ে নতুন ধরনের কাঁকড়া চাষাবাদ বাংলাদেশে আমরাই প্রথম করছি। পাইলট প্রকল্পে আমরা সফলতা পেয়েছি। এজন্য দেশের বাইরে থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। সম্পূর্ণ দেশিয় যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে এই প্রকল্প এগিয়ে নিচ্ছি। ভার্টিক্যাল ক্র্যাব ফার্মিংয়ে উৎপাদন ক্ষমতা সাধারণের চেয়ে ২০ গুন বেশি। প্রকৃতিকে ক্ষতি না করে উৎপাদন বৃদ্ধির এই প্রযুক্তি আমরা ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছি। ফিল্ড অফিসে প্রায় ৪/৫ জন কাজ করেন। 

তবুও এগিয়ে যাচ্ছি...

মাছের বাজারে অস্থিরতা, গুনগত মান ঠিক রেখে চূড়ান্ত ভোক্তার দোর গোঁড়ায় পৌঁছে দেওয়াই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কোন কোম্পানি পচনশীল মাছের ডেলিভারি দিতে চান না। সে জায়গায় এখনও চ্যালেঞ্জ ফেস করছি। সমাধানের পথ খুঁজছি। মূলধনের স্বল্পতা ছিল বড় প্রতিবন্ধকতা। স্বামী-স্ত্রী ও পরিচিতদের থেকে মূলধন যোগাড় করে এগিয়ে যাচ্ছি। 

দাম ও মানের পার্থক্য

আরেকটি বড় সমস্যা আছে। তাজা মাছ ও অ্যাডেটিভ যোগ করা মাছের মূল্যের মধ্যে পার্থক্য। যা শুরুতে আমাদের গ্রাহকদের বোঝাতে কষ্ট হয়েছে। তবে আমাদের পণ্য যারা খেয়েছেন তারা বুঝতে পেরেছে বাজার থেকে কেন আমাদের পণ্য আলাদা।   

সারা দেশে ডেলিভারি

বর্তমানে সাতক্ষীরার পাশাপাশি ঢাকাতে আমাদের ডেভেলপমেন্ট অফিস আছে। সেখানে কর্মরত আছেন ৩ জন সুদক্ষ কর্মী। যাদের সততা ও অক্লান্ত পরিশ্রমে আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে ফুড নেটওয়ার্ক এগ্রো লিমিটেড। মূলত ঢাকার তেজগাঁও অফিস থেকে সারা দেশে পণ্য ডেলিভারি দিচ্ছি আমরা। অফিসে এসেও অনেকেই পছন্দের পণ্য সংগ্রহ করছেন।    

প্রচার-প্রচারণাও চলছে..

আপাতত প্রচারণা করছি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। তবে আমরা বিশ্বাস করি পণ্যের গুনগত মানই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রচারণা।   

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

গুণগত মান ধরে রেখে ঘরে ঘরে রেডি টু কুক মাছ তুলে দিতে চাই। সে লক্ষে বেশ কিছু সুপার শপে আমাদের পণ্য ডিসপ্লে হচ্ছে। ডিলার নিয়োগের মাধ্যমে আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে ভালো মাছ পৌঁছে দিতে চাই।

বিস্তারিত জানা যাবে www.facebook.com/foodnetworkagro এই ঠিকানায়।