মো. খাইরুল ইসলাম। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে। ৩৬তম বিসিএসে জায়গা করে নিয়েছেন প্রশাসন ক্যাডার হিসেবে। বর্তমানে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত আছেন রংপুরের পীরগঞ্জে। সম্প্রতি তিনি কথা বলেছেন ঢাকা পোস্টের সঙ্গে। 

বেড়ে ওঠার গল্প...

বগুড়া শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরের এক প্রত্যন্ত এলাকায় আমার বেড়ে ওঠা। বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নদী। নদী ভাঙনের ভয়ানক অভিজ্ঞতা এ অঞ্চলের মানুষকে বদলে দিয়েছে। শিখিয়েছে টিকে থাকার লড়াই। এই জনপদের মাটি ও মানুষের সঙ্গেই কেটেছে আমার শৈশব। দুরন্ত শৈশব।

এত চাকরি থাকতে সিভিল সার্ভিসে কেনো আসলেন?

ছাত্রজীবনের শুরু থেকেই সরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছি। পরবর্তী সময়ে সুযোগ হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। আমার মনে হয়, সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকায় পড়াশোনা করে বেসরকারি চাকরি করা ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থের মতো। তাই দায়বদ্ধতা থেকেই সিভিল সার্ভিসে আসা। 

বিসিএসে প্রস্তুতিতে যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন

বিসিএস পরীক্ষায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে গণিতের মতো নম্বর পাওয়া সম্ভব। আমি গণিতের শিক্ষার্থী হওয়ায় বিষয়টি আমার কাছে অনেকটা ডাল-ভাত ছিল। কিন্তু ইংরেজি ও বাংলা গ্রামার অংশেও ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারলে গণিতের মতো ছাঁকা নম্বর তুলে আনা সম্ভব। পাশাপাশি বাংলাদেশ বিষয়াবলীতে সংবিধান অংশ এবং বাংলা থেকে ইংরেজি ও ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদেও ভালো নম্বর পাওয়া যায়। একইসঙ্গে মানসিক দক্ষতা এবং গণিতের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

ভালো প্রস্তুতির জন্য কি কি বই পড়ায় উচিত-

সবাইকে একটি কথা মনে রাখতে হবে, ভালো প্রস্তুতির জন্য পাঠ্য বইয়ের বিকল্প নেই। বিশেষ করে নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ, সাধারণ বিজ্ঞান এবং সাধারণ গণিত নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। প্রস্তুতি বিষয়ক বাজারে বিভিন্ন ধরনের বই পাওয়া যায়। সেখান থেকে বাছাই করে ভালো একটি বই সংগ্রহ করে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

জীবনে উত্থান পতনের মুখোমুখি নিশ্চয়ই হয়েছেন। সেসব গল্পও জানতে চাই-

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় পছন্দের বিষয়ে ভর্তি হতে পারিনি। শুধু আমি নই এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। প্রথম থেকেই গণিত আমার ভালো লাগতো না। গণিতের সঙ্গে কোথায় যেন এক বৈরী সম্পর্ক ছিল। ফলে এ বিষয়ে ভালোবাসা না থাকায় মনে ভর করেছিল হতাশা। এর প্রতিফলন ঘটেছে প্রথমদিকের একাডেমিক ফলাফলেও। তবুও থেমে যায়নি। পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে সামলে নিতে শিখেছি। দিন যত গড়িয়েছে, গণিতের সঙ্গে প্রেম-ভালোবাসা জন্মেছে। পরে এ বিষয়েই একাডেমিক পাঠ সম্পন্ন করি।

এ পর্যন্ত আসতে, অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে কারা?

অনুপ্রেরণা বলতে আমার পরিবারকেই বুঝি। সুখে-দুঃখে তারাই পাশে থেকেছে। সাহস যুগিয়েছে। এই মুহূর্তে আমার বড় ভাইকে খুব মনে পড়ছে। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করে একটি কলেজের প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জীবন যখন বোঝা হয়ে চেপে ধরেছে, তখনও নীরবে পাশে ছিলেন আমার ভাই। ভেঙে যাবার গল্প আর হতাশা থেকেই দেখিয়েছেন আলো। মোট কথা পরিবার পাশে না থাকলে কখনো ​ম্যাজিস্ট্রেট হতে পারতাম না

নতুনদের জন্য পরামর্শ...

নতুনদের জন্য বলতে চাই, পড়ার কোন বিকল্প নেই। নিজেকে ভালো অবস্থানে দেখতে চাইলে ভালো প্রস্তুতি নিতেই হবে। এ জন্য নিজের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করতে হবে।