প্রতিকী ছবি

২০১৫ সালের অক্টোবরে উদ্ধার হওয়া একটি কঙ্কালের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে সেটি নারীর কঙ্কাল বলে উল্লেখ করা হলেও ওই কঙ্কালেরই ডিএনএ টেস্ট রিপোর্ট বলছে সেটি একটি পুরুষের কঙ্কাল। আর এই প্রতিবেদন দেখিয়ে স্ত্রী হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার ওমর ফারুক নামে এক ব্যক্তি জামিন চেয়েছেন হাইকোর্ট থেকে।

ওমর ফারুক তার স্ত্রী পুতুল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আছেন। গত ৫ বছর ধরে তিনি কারাগারে। রোববার এ বিষয়ে শুনানি হয়েছে হাইকোর্টে। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ ওমর ফারুকের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেননি, তবে বিচার কাজ ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতে আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর সিলেটের জাফলং ভ্যালি বোর্ডিং স্কুলের পাশের পাশের জঙ্গল থেকে অর্ধগলিত একটি কঙ্কাল উদ্ধার করে জৈন্তাপুর থানা পুলিশ। সুরতহাল রিপোর্টে লাশের শরীর থেকে লাল রঙের বক্ষবন্ধনী এবং সোনালী রঙের চুড়ি আলামত হিসেবে জব্দের তথ্য দেওয়া হয়। এরপর তার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় ওই বছরের পহেলা নভেম্বর স্থানীয় একটি পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর নিজ মেয়ে পুতুল নিখোঁজের অভিযোগে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন পুতুলের মা আনোয়ারা বেগম।  

ওই বছরেরই ৩ নভেম্বর পুলিশ পুতুলের স্বামী ওমর ফারুক দোলনকে গ্রেপ্তার করে। এরও পরদিন ৪ নভেম্বর সিলেটের জৈন্তাপুর থানায় মামলা করেন নিহতের মা আনোয়ারা বেগম। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ১৯ অক্টোবর টেলিফোনে ডেকে নিয়ে মাথায় আঘাত করে ও গলায় ওড়না পেঁচিয়ে পুতুলকে হত্যা করেন ওমর ফারুক। মামলা দায়েরের পরদিন ৫ নভেম্বর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দেন ওমর ফারুক। ওইবছরের পহেলা নভেম্বর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। লাশটি কার তা নিশ্চিত হতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয়। ২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বর ডিএনএ প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, অজ্ঞাতনামা লাশটি কোনো পুরুষের। আর পুতুলের বাবা রফিক মিয়া ও মা আনোয়ারা বেগমের সঙ্গে এর জৈবিক মিলও নেই। এর কয়েকমাস পর ২০১৭ সালের ১২ মার্চ অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এর ভিত্তিতে আদালতে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরইমধ্যে সিলেটের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণও সম্পন্ন হয়েছে।  

আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির জানান, ময়নাতদন্ত শেষে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, লাশটা দেখে প্রতীয়মান হয় ২/৩ মাস আগে মৃত্যু হয়েছে। তবে লাশটি কোনো নারীর বলে প্রাথমিকভাবে মনে হয়। তবে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয়। ডিএনএ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লাশটি কোনো পুরুষের। আর পুতুলের মা ও বাবার ডিএনএ’র সঙ্গে ওই লাশের ডিএনএ’র মিল নেই। তাহলে কিসের ভিত্তিতে আসামি ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা চলে? গত ৫ বছর ধরে এই আসামি কারাগারে আছে। এ কারণে জামিন আবেদন করা হয়।

তবে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী জানান, মামলার বাদী বলেছেন, ফোন করে তার মেয়েকে ডেকে নিয়ে যান আসামি। এরপর লাশ উদ্ধার করা হয়। আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আর সুরতহাল ও ময়না তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী লাশটি একজন নারীর। কিন্তু ডিএনএ পরীক্ষায় এলো যে লাশটি একজন পুরুষের। 

তিনি বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিএনএ প্রতিবেদন পাওয়ার পর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবরেটরিতে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন হাজার খানেক নমুনা পলিথিনের ব্যাগ ও কাগজে মোড়ানো খামে লেবেলবিহীন অবস্থায় রাখা আছে। এতে সঠিকভাবে আলামত চিহ্নিত করে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো সম্ভব না বলে প্রতিবেদন দিয়ে বলেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। এছাড়াও তদন্ত কর্মকর্তা আবারও লাশের ডিএনএ পরীক্ষার উদ্যোগ নেন। তিনি লাশটির কবর চিহ্নিত করার জন্য গেলেও তা পারেননি। কারণ অনেকদিন আগের কবর সংরক্ষণ করার সুযোগ নেই বলে জানানো হয়। এ কারণে দ্বিতীয়বার ডিএনএ পরীক্ষা করা যায়নি।  

এমএইচডি/এনএফ