সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন পরিচালনায় গঠিত উপ কমিটির প্রধান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ.ওয়াই মশিউজ্জামান তার দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল এখনও ঘোষণা করা হয়নি। এর আগেই পদত্যাগ করলেন মশিউজ্জামান।

শনিবার (১৯ মার্চ) নির্বাচন পরিচালনায় গঠিত উপ-কমিটির একাধিক সদস্য বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।

তবে সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে অভিমান করে তিনি পদত্যাগ পত্র দিয়েছেন। আমি এটাকে পদত্যাগ পত্র বলব না। আশা করছি দুই একদিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের সাথে মিটিং করে তিনি অসমাপ্ত কাজ শেষ করবেন।

কী হয়েছিল সেদিন রাতে

প্রত্যক্ষদর্শী কমপক্ষে ১০ জন আইনজীবী ঢাকা পোস্টকে জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের ভোট গণনা শেষ হয়। গণনা শেষে দেখা যায়, সভাপতিসহ ৬টি পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল ও সম্পাদকসহ ৮টি পদে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল বিজয়ের পথে। সম্পাদক পদে নীল প্যানেলের ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল আওয়ামী লীগের প্রার্থী থেকে অল্প ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে। এ অবস্থায়  নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণার প্রস্তুতি নিলে সম্পাদক পদে ভোট পুনরায় গণনার দাবি তোলেন আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। তারা সম্পাদক পদে ভোট কারচুপি ও বাতিল হওয়া ভোট কাজলের পক্ষে গণনা করার অভিযোগে আনেন।

নির্বাচন কমিশনের প্রধান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ.ওয়াই মশিউজ্জামান অভিযোগ নাকচ করে ফলাফল ঘোষণা করতে অনড় থাকলে মিছিল, শ্লোগান, হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা ব্যাপক হৈ চৈ শুরু করেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সম্পাদক প্রার্থী আব্দুন নূর দুলাল লিখিতভাবে ভোট পুনরায় গণনার আবেদন করেন। আবেদন গ্রহণ না করলে নির্বাচন কমিশনের প্রধান এ. ওয়াই মশিউজ্জামানকে পদত্যাগ করতে বলেন আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। তার পদত্যাগের দাবিতে শ্লোগান দেওয়া হয়।

উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে রাত সাড়ে তিনটার দিকে নির্বাচন পরিচালনায় গঠিত কমিটির প্রধান এ.ওয়াই মশিউজ্জামান সম্পাদক পদে ভোট পুনরায় গণনার আবেদন নেন ও ভোটের ফলাফল ঘোষণা স্থগিত করেন। ওই সময় তিনি জানান, শুক্রবার বিকেল ৩টায় দুই সম্পাদক প্রার্থীর উপস্থিতিতে ভোট পুনরায় গণনার করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

কিন্তু গতকাল (১৯ মার্চ) অ্যাডভোকেট এ.ওয়াই মশিউজ্জামান সুপ্রিম কোর্ট বারে আসেননি। এ কারণে ভোট পুনর্গণনার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

গত ১৫ ও ১৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দুই দিনব্যাপী নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ৫ হাজার ৯৮২ জন আইনজীবী ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে রাত প্রায় ১টা পর্যন্ত চলে ভোট গণনা।

নির্বাচনী সাব কমিটির একাধিক সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতিসহ ৬টি পদে  আওয়ামী লীগের সাদা প্যানেল ও সম্পাদকসহ ৮টি পদে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের প্রার্থীরা এগিয়ে আছেন। সভাপতি পদে সাদা প্যানেলের অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও সম্পাদক পদে নীল প্যানেলের ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এগিয়ে।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল থেকে এগিয়ে থাকা অন্য ৫ জন হলেন- সহ সভাপতি পদে সহ-সভাপতি পদে মো. শহীদুল ইসলাম ও মোহাম্মদ হোসেন, সদস্য পদে ফাতেমা বেগম, সাহাদত হোসাইন রাজিব ও সুব্রত কুমার কুন্ডু।

বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে এগিয়ে থাকা অন্য ৭ জন হলেন, সহ-সম্পাদক পদে মাহফুজ বিন ইউসুফ ও মাহবুবুর রহমান খান, ট্রেজারার মোহাম্মদ কামাল হোসেন, সদস্য ব্যারিস্টার মাহদীন চৌধুরী, গোলাম আক্তার জাকির, মো. মনজুরুল আলম সুজন ও কামরুল ইসলাম।

এমএইচডি/এমএইচএস