অবশেষে বাবা-মায়ের কাছে রাজধানীর মুগদার বাসায় রোববার পর্যন্ত থাকতে সম্মত হয়েছেন ১৯ বছরের কানাডিয়ান তরুণী। এ কারণে ওই তরুণীকে কানাডায় নিয়ে যেতে দেশটির হাইকমিশনের রিটের আদেশের জন্য রোববার দিন ধার্য করেছেন আদালত।

বুধবার ১৯ বছর বয়সী কানাডিয়ান তরুণীকে গৃহবন্দি রাখার অভিযোগের রিটের আদেশের জন্য বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন।

আদালতে ওই তরুণী বলেন, রোববার পর্যন্ত বাবা মায়ের কাছে থাকতে চাই। 

তখন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ফারাহ মাহবুব তরুণীকে মা সম্বোধন করে বলেন, আমরা তোমার কথামত রোববার পর্যন্ত এই রিট মামলা মুলতবি করছি। রোববার আদেশ দেব। রোববার কানাডার হাইকমিশনে যাওয়ার সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়ে আসতে হবে। এরপর আর কোন সময় দেওয়া হবে না। 

এর আগে সকালে হাইকোর্ট বলেছিলেন, ১৯ বছরের তরুণী আর এক মুহূর্ত বাবা মায়ের কাছে বাংলাদেশে থাকতে চান না। তিনি কানাডা যেতে চান। তাই আমরা আজই আদেশ দিয়ে তাকে কানাডিয়ান দূতাবাসে পাঠিয়ে দেব।

এ সময় তরুণীর বাবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি নিজেই আমার মেয়েকে কানাডা নিয়ে যেতে চাই। কয়েকটা দিন আমাদের কাছে থাকুক। 

তখন আদালত বলেন, আপনার মেয়ের সঙ্গে কথা বলুন। সে যদি আপনাদের সঙ্গে থাকতে চায়, তাহলে আমরা রোববার আদেশ দিব। অন্যথায় আজই আদেশ দিয়ে তাকে কানাডা দূতাবাসে পাঠিয়ে দেব। কারণ সে এক মুহূর্ত আপনাদের কাছে থাকতে চান না। 

সকালে কানাডা হাইকমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশি বাবা-মায়ের সন্তান ১৯ বছরের কানাডিয়ান তরুণীর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা, থাকা খাওয়ার খরচ বহনসহ সব ধরণের নিরাপত্তা দেবে কানাডা সরকার। হাইকোর্টকে লিখিতভাবে কানাডা হাইকমিশনের পক্ষে এ তথ্য জানান রিটের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন। পরে এজলাস কক্ষে একান্তে তরুণীর কথা শোনেন।

গতকাল হাইকোর্ট বলেছিলেন, ১৯ বছরের প্রাপ্ত বয়স্ক তরুণী বাবা-মা ছেড়ে কানাডা যেতে চান, তাকে আটকে রাখা যাবে না। তবে তরুণীর নিরাপত্তা কানাডা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে।

গত ৫ এপ্রিল রাজধানীর উত্তর মুগদায় ১০ মাস ধরে বাবা-মায়ের বাসায় গৃহবন্দি থাকা ১৯ বছরের কানাডিয়ান তরুণীকে হাজির করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। মুগদা থানার পুলিশ ও তার বাবা-মাকে তরুণীকে হাজির করতে বলা হয়।

একইসঙ্গে ১৯ বছরের তরুণীর অসম্মতিতে তাকে ১০ মাস ধরে আটক রাখা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

রিটের নথি থেকে জানা যায়, ১৯ বছরের ওই তরুণীর জন্ম কানাডায়। তিনি জন্মসূত্রে কানাডার নাগরিক। কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তার বাবা-মাও কানাডায় থাকতেন। ১০ মাস আগে তার বাবা-মা বেড়ানোর কথা বলে তাকে নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। এরপর ওই তরুণী কানাডায় ফিরে যেতে চাইলেও তাকে যেতে দেওয়া হয়নি।

রিট আবেদনে বলা হয়েছে, তরুণীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তাকে তার নানী ও মা সবসময় বাসায় বন্দি করে রাখেন। এক পর্যায়ে ওই তরুণী ল্যান্ড ফোনে কানাডা সরকার ও ঢাকার কানাডিয়ান হাইকমিশনকে তাকে জোরপূর্বক ঘরবন্দি করে রাখার কথা জানান। ওই তরুণী কানাডায় ফিরে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানান। 

গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মুগদা থানায় কানাডিয়ান হাইকমিশন থেকে সাধারণ ডায়েরি করা হয়। তারপর হাইকমিশনের পক্ষে মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্ট, আইন ও সালিশ কেন্দ্র হাইকোর্টে রিট করে। রিটে পুলিশের আইজি, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, মুগদা থানার ওসি, ওই তরুণীর বাবা-মাকে বিবাদী করা হয়।

এমএইচডি/আইএসএইচ