ঘণ্টাব্যাপী একটি প্রতিবেদন সম্প্রচার হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম বলা হচ্ছে। অভিযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু তার সঙ্গে কোনো যোগসূত্র দেখাতে পারলেন না।

সম্প্রতি আল জাজিরার প্রচারিত তথ্যচিত্র ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ প্রসঙ্গে আদালতে এ অভিমত দেন অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামাল উল আলম।

সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চে তিনি এই অভিমত দেন।

অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামাল উল আলম বলেন, রিট আবেদনকারীর সংক্ষুব্ধ হওয়ার যৌক্তিকতা নেই। রিটটি গ্রহণযোগ্য নয়। তবে তিনি বলেছেন, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তিকে বিতর্কিত করা হলে রাষ্ট্রকেই বিতর্কিত করা হয়।

তিনি আরও বলেন, ঘণ্টাব্যাপী একটি প্রতিবেদন সম্প্রচার হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম বলা হচ্ছে। অভিযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু তার সঙ্গে কোনো যোগসূত্র দেখাতে পারলেন না।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতে বলেন, বাংলাদেশে আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ করা উচিত হবে না। এ বিষয়ে রিটটি গ্রহণযোগ্য নয় বলেও অভিমত দেন তিনি।

অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফিদা এম কামাল ও প্রবীর নিয়োগীও আদালতে বলেছেন রিট আবেদনটি গ্রহণযোগ্য নয়। আরও দুই অ্যামিকাস কিউরি আব্দুল মতিন খসরু ও শাহদীন মালিক তাদের মতামত আদালতে তুলে ধরবেন।

বাংলাদেশে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরা টেলিভিশন নেটওয়ার্কের সম্প্রচার বন্ধে ও অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ সরাতে হাইকোর্ট কোনো আদেশ দিতে পারে কি না, সে বিষয়ে অ্যামিকাস কিউরিদের বক্তব্য শুনবেন হাইকোর্ট।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরা টেলিভিশন নেটওয়ার্কের সম্প্রচার বন্ধে ও অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ সরাতে হাইকোর্ট কোনো আদেশ দিতে পারে কি না ও রিটের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে মতামত জানতে ৬ জন অ্যামিক্যাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) নিয়োগ দেন হাইকোর্ট। এই ৬ আইনজীবী হলেন- সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ফিদা এম কামাল, সিনিয়র আইনজীবী আব্দুল মতিন খসরু, সিনিয়র আইনজীবী কামাল উল কামাল, প্রবীর নিয়োগী ও আইনজীবী শাহদীন মালিক। 
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী, বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট রেজা-ই রাকিব।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরা টেলিভিশন নেটওয়ার্কের সম্প্রচার বন্ধে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। রিটে সংবাদমাধ্যমটির প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ প্রতিবেদনটি ইউটিউব, টুইটার, ফেসবুকসহ সব অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে অপসারণ করার নির্দেশনা চাওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমন এ রিট দায়ের করেন।

রিটে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, তথ্য ও প্রযুক্তি সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, পুলিশ মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।

আল জাজিরায় গত ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সম্প্রচারিত হয়, যা ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। প্রতিবেদনে উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়। সরকারিভাবে এই প্রতিবেদনের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও ওই প্রতিবেদনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে আল জাজিরা টিভি নেটওয়ার্কের দেওয়া ওই প্রতিবেদনটিকে অসত্য বানোয়াট অভিহিত করা হয়েছে।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, ‘আল জাজিরায় প্রচারিত ও প্রকাশিত প্রতিবেদনটির তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সদরদপ্তর।’

আল জাজিরার প্রতিবেদনটি মন্দ সাংবাদিকতার দৃষ্টান্ত
অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এবং অনেক ক্ষেত্রেই সাংবাদিকতার নীতি নৈতিকতা না মেনে প্রচার করা হয়েছে বলে মনে করছে সম্পাদকদের বৃহত্তম সংগঠন এডিটরস গিল্ড।
 
এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল হক বাবু স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পুরো বিষয়টি একটি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে, অথচ শিরোনাম করা হয়েছে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন’। বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারিত বিশেষ কিছু অভিযোগের বয়ান দিতে গিয়ে প্রমাণহীনভাবে ‘প্রাইম মিনিস্টার’স মেন’ টার্মটা ব্যবহার করা মন্দ সাংবাদিকতা বলে দাবি করছে এডিটরস গিল্ড। সংগঠনটি মনে করে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নির্মিত ও পক্ষপাতদুষ্ট একটি তথ্যচিত্র কোনোভাবেই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার দৃষ্টান্ত হতে পারে না। পুরো ডকুমেন্টারিটির ভিত্তি হলো একজন মানুষের কিছু অনানুষ্ঠানিক ও আড্ডার আলাপ, যার কোনো গ্রহণযোগ্য প্রমাণ এতে উপস্থাপিত হয়নি।

আল জাজিরার প্রতিবেদন মনগড়া, উদ্দেশ্যমূলক ও মিথ্যা
আল জাজিরা প্রকাশিত প্রতিবেদনে পুলিশ সম্পর্কে ‘মনগড়া, উদ্দেশ্যমূলক ও মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে’ দাবি করে প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। 

অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম আল-জাজিরার ওই প্রতিবেদনের তীব্র নিন্দা জানান।

আল জাজিরার বিরুদ্ধে মামলা করব
প্রকাশিত প্রতিবেদনের জন্য গণমাধ্যমটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বনানী আর্মি স্টেডিয়ামে এক অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

আলজাজিরার প্রতিবেদন বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আলজাজিরার প্রতিবেদনে যেসব ভুল তথ্য আছে, সেগুলো আমরা তুলে ধরব। আর আমরা মামলা করব, সেটার জন্য কাজ করছি।’

এমএইচডি/জেডএস