ব্লগার অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ

‘বাবা-মা ও বড় ভাই তিন জনকে হারিয়ে মনের অবস্থা ভালো না। আজ যদি বাবা-মা ও বড় ভাই বেঁচে থাকতেন তাহলে একটু সাহস পেতাম। জীবনটা যেন কেমন হয়ে গেছে। বড় ভাইয়ের এমন ঘটনার পর থেকে অনেক ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি। বাসা থেকে যখন বের হই, তখন মনে হয় যেন প্রাণ হাতে নিয়ে বের হচ্ছি। কখন কী ঘটনা ঘটে? বলা তো যায় না। বড় ভাই অভিজিৎ রায়কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি এলাকায় প্রকাশ্যে ঠান্ডা মাথায় সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করেন আসামিরা। আমি সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড আশা করি।’

মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ব্লগার অভিজিৎ হত্যা মামলার রায়। মামলার রায়ে প্রত্যাশার বিষয়ে জানতে চাইলে অভিজিৎ রায়ের ছোট ভাই অনুজিৎ রায় ঢাকা পোস্ট-কে এসব কথা বলেন।

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় ব্লগার অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হন তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ। ওই ঘটনায় অভিজিতের বাবা প্রয়াত অধ্যাপক ড. অজয় রায় শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ছেলে হত্যার বিচারের আশায় অসুস্থ শরীরে হুইল চেয়ারে বসে ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর আদালতে এসে সাক্ষ্য দেন ড. অজয় রায়।

এর দেড় মাসের মাথায় ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর মারা যান ড. অজয় রায়। দেখে যেতে পারলেন না ছেলে হত্যার বিচার। বুকভরা আশা নিয়ে সে দিন সাক্ষী দিতে আদালতে এসেছিলেন তিনি।

অনুজিৎ রায় বলেন, ‘বাবার অনেক আশা ছিল, ভাইয়ের হত্যার বিচার দেখে যেতে কিন্তু রায় তো হচ্ছে। বাবা দেখলেন না, আমরা পরিবার থেকে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার পাওয়া নিয়ে অনেক ধৈর্য ধরেছি। তার ফলটা হয়ত অনেক দীর্ঘ সময় পরে হলেও পাচ্ছি।’

অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘তিনি বর্তমানে আমেরিকায় আছেন। তার পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছেন।’

গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিউপস্থাপন শুনানি শেষে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুজিবুর রহমান মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য ১৬ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।

কী রায় প্রত্যাশা করছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর গোলাম সারোয়ার খান জাকির ঢাকা পোস্ট-কে বলেন, ‘এই মামলায় তিন জন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে কে কীভাবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত তা উল্লেখ করেছেন। তদন্ত কর্মকর্তা তার সাক্ষীতে যে কথাগুলো উল্লেখ করেছেন এবং তা তদন্ত রিপোর্টেও উঠে এসেছে। তদন্ত প্রতিবেদন ও সাক্ষীদের জবানবন্দিতে আমরা রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পেরেছি এ আসামিরা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তাই আমরা সব আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড আশা করি।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্ট-কে বলেন, ‘আমরা সাক্ষ্য প্রমাণ ও যুক্তিউপস্থাপনে আদালতকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি এ মামলায় আসামিরা জড়িত নয়। তাদের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষী আদালতে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারেননি। শুধুমাত্র আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে কোনো আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দেওয়া যায় না‌। তাই আসামিরা আমাদের দৃষ্টিতে খালাস পাওয়ার হকদার।’

অভিজিৎ হত্যা মামলার আসামিরা হলেন- মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন, মো. আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহা, মো. আরাফাত রহমান, শাফিউর রহমান ফারাবী, সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া (বরখাস্ত) এবং আকরাম হোসেন ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে হাসিবুল ওরফে আবদুল্লাহ। শেষের দুজন পলাতক রয়েছেন।

২০১৯ সালের ১৩ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (পরিদর্শক) মো. মনিরুল ইসলাম এই মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ওই বছরের ১ আগস্ট ছয় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান।

২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায়ের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। গত ২১ জানুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।

টিএইচ/এফআর