অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ড পাওয়া আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম তিন ছেলের হাত ধরে নিম্ন আদালতে উপস্থিত হয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। 

রোববার (২২ মে) বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এ হাজী সেলিম তিন ছেলে সোলাইমান সেলিম, এরফান সেলিম, সালমান সেলিম ও তার আইনজীবীসহ উপস্থিত হন। এরপর বিচারক শহিদুল ইসলামের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি।

এর আগে হাজী সেলিম যখন আদালতে প্রবেশ করেন, তখন বাইরে তার সমর্থকরা আল্লাহু আকবার বলে চিৎকার করতে থাকেন। তারা বলতে থাকেন, কিছু হবে না, আমরা আছি। হাজী সেলিমের সঙ্গে তার সমর্থকেরা ধাক্কাধাক্কি করে আদালত কক্ষের ভেতরে চলে যান। পরে পুলিশ তাদের বাইরে বের করে ভেতর দিয়ে গেট আটকে দেয়।

গাড়িতে করে হাজী সেলিম অনেক আগেই আসেন আদালত পাড়ায়। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর প্রবেশ করেন আদালতের ভেতরে।

আগে থেকেই আদালতের বাইরে তার সমর্থক ও নেতাকর্মীরা ভিড় করেছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি রয়েছে আদালতের মূল ফটকে।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় হাজী সেলিমকে বিচারিক আদালতের দেওয়া ১০ বছর কারাদণ্ড বহালের রায় হাইকোর্ট থেকে গত ২৫ এপ্রিল নিম্ন আদালতে পাঠানো হয়।

দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান ওই দিন বলেছিলেন, হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী ২৫ এপ্রিল থেকে ৩০ দিনের মধ্যে হাজী সেলিমকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে। সে অনুযায়ী নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই আত্মসমর্পণ করতে এসেছেন হাজী সেলিম।

২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল তাকে দুই ধারায় ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।

২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন হাজী সেলিম। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে তার সাজা বাতিল করেন।

পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের আগের রায় বাতিল করে পুনরায় হাইকোর্টেই শুনানির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।

২০২১ সালের ৯ মার্চ বিচারিক আদালতের দেওয়া ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দিয়েছিলেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রায় প্রকাশ করা হয়।  

রায় ঘোষণার পর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানিয়েছিলেন, দুদক আইনে (২৬ এর ২ ধারা) করা মামলায় সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে হাজী সেলিমকে বিচারিক আদালত ৩ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন। সেই অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় হাজী সেলিমকে তথ্য গোপনের অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। কিন্তু দুদক আইনের ২৭ (১) ধারা অনুসারে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে হাজী সেলিমকে বিচারিক আদালত ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন। ওই অভিযোগে তার সাজা বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশের রায় দেন আদালত।

এএসএস/জেইউ/এআর/আরএইচ