অনেকটা গোপনে প্রায় এক মাস আগে হাইকোর্ট থেকে জামিন পান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার প্রধান আসামি ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব।

হাইকোর্টের জামিন আদেশ নিয়ে যশোর কারাগারে থেকে তাকে বের করার গোপন তোড়জোড় চলছিল। তবে জামিনের বিষয়টি ‘অবগত’ ছিল না অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়।

গতকাল (মঙ্গলবার) হঠাৎ অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় তার জামিন পাওয়ার বিষয়টি জানতে পারে। খবর পেয়ে নড়েচড়ে বসে কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের ওই সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত দুজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের (ডিএজি) কাছে তাৎক্ষণিক লিখিত ব্যাখ্যা চান অ্যাটর্নি জেনারেল। কেন তার (এমপি হাবিব) জামিন পাওয়ার বিষয়টি জানানো হয়নি লিখিত ব্যাখ্যায় জানতে চাওয়া হয়। নজরে আনা হয় সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চের।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ শুধু হাবিবুল ইসলাম হাবিবের জামিন পাওয়ার বিষয় শুনানির জন্য দুপুর ১২টায় বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক ও বিচারপতি আশিষ রঞ্জন দাশের বিশেষ হাইকোর্ট বেঞ্চ বসেন। হাইকোর্ট গত ২৮ এপ্রিল বিএনপির সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে দেওয়া জামিন আদেশ প্রত্যাহার করে আদেশ দেন।

সার্বিক বিষয়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ২৮ এপ্রিল হাইকোর্ট থেকে হাবিবুল ইসলাম হাবিব গোপনে জামিন করিয়ে নিয়েছিলেন। তার জামিন পাওয়ার বিষয়টি আমরা তখন জানতে পারিনি। গতকাল জামিনের বিষয়ে জানতে পারি। পরে বিষয়টি আদালতের নজরে আনি। আজ স্পেশাল কোর্ট বসে জামিন আদেশ প্রত্যাহার করেছে। তাই হাবিবুল ইসলাম হাবিব আর কারাগার থেকে বের হতে পারছেন না।
 

অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর

এক প্রশ্নের জবাবে এস এম মুনীর বলেন, ঈদের আগে শেষ কোর্ট ছিল ২৮ এপ্রিল। শেষ কার্যদিবস হওয়ায় বেশি ভীড় ছিল। ওই ভীড়ের মধ্যে এ জামিনটা করে নিয়েছিল। 

দুই ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে শোকজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের দুই ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে ওইদিনে হাবিবের জামিন পাওয়ার বিষয়ে জানতে চেয়েছি।  লিখিত ব্যাখ্যা চেয়েছি কেন তার জামিন আদেশের বিষয় আমাদের জানানো হয়নি।

পরে তারা বলেছেন, ২৮ এপ্রিল হাবিবুল ইসলাম হাবিবুল হাবিবের জামিন বিষয়ে হাইকোর্ট শুধু রুল দিয়েছিলেন। সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের কর্মকর্তারা এই জামিন আদেশের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। আমরা বিষয়টি আদালতের নজরে এনেছি। আদালত ২৮ এপ্রিলের সেই আদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। 

তবে সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবুল হাবিবের জামিন সংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশের অনুলিপি ঢাকা পোস্টের হাতে এসেছে। আদেশে তাকে রুলের পাশাপাশি ৬ মাসের জামিন দেওয়া হয়েছিল।

যশোর-সাতক্ষীরা সড়কে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। ওইদিনই কলারোয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেম উদ্দিন বাদি হয়ে মামলা করেন। এ মামলায় তদন্ত শেষে বিএনপির হাবিবুল ইসলামসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।

আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এই হামলা হয়েছে। এরপর মামলার আসামি রাকিবের আবেদনে ২০১৭ সালের ২৩ আগস্ট হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। একইসঙ্গে রাকিবের ক্ষেত্রে মামলার কার্যক্রম কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়। পরে রাকিবকে জামিন দেওয়া হয়। রাকিবের আবেদন ছিল, যখন ঘটনার কথা বলা হয় তখন অর্থাৎ ২০০২ সালে তার বয়স ছিল ১০ বছর। সুতরাং তার বিচার হতে হলে শিশু আইনে হবে। বড়দের সঙ্গে দায়রা জজ আদালতে করা যাবে না।

২০২০ সালের ৮ অক্টোবর ওই রুল খারিজ করে রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাকিবুর। এ আবেদনে আপিল বিভাগ তিনমাসের মধ্যে নিম্ন আদালতে বিচার সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন। এরপর বিচার শেষে সাতক্ষীরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় সব আসামিকে সাজা দিয়ে রায় দেন। রায়ে হাবিবুল ইসলামকে কয়েকটি ধারায় ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন। এছাড়া সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তারসহ অপরাপর আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।

এমএইচডি/এসএম