ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জনসহ ৮ ডাক্তারের ক্ষমা প্রার্থনা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে শিশু ধর্ষণের এক ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুর তিনটি মেডিকেল রিপোর্ট ও একটি ছাড়পত্রে অসঙ্গতির ঘটনায় দোষ স্বীকার করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট আট চিকিৎসক। চিকিৎসকরা বলেছেন, ভবিষ্যতে ভুল হবে না এবং দায়িত্ব পালনে তারা সর্তক থাকবেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের হাইকোর্ট বেঞ্চে হাজির হয়ে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পরে আদালত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন, এসপিসহ ১১ জনকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে আপাতত অব্যাহতি দেন।
বিজ্ঞাপন
এসময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসপিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তা আদালতে বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আদালতের আদেশ আমরা মেনে চলব।
আদালতে আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুটির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. শাহ পরান চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনিরুল ইসলাম।
বিজ্ঞাপন
এর আগে সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে শিশু ধর্ষণের এক ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুর তিনটি মেডিকেল রিপোর্ট ও একটি ছাড়পত্রে অসামঞ্জস্যতার ব্যাখ্যা দিতে হাইকোর্টে হাজির হন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন, পুলিশ সুপারসহ ১১ কর্মকর্তা।
ওই ১১ জন হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. একরাম উল্লাহ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিছুর রহমান, নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এটিএম আরিফুল হক, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. একরামুল রেজা, ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য ডা. ফাহমিদা আক্তার, ডা. তোফায়েল হক, ডা. ফরিদা ইয়াসমিন এবং নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. সৈয়দ মো. শাহরিয়ার, ডা. তাসনিম তামান্না ও ডা. মো. শফিকুল ইসলাম।
গত ১৭ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে শিশু ধর্ষণের এক ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুর তিনটি মেডিকেল রিপোর্ট ও একটি ছাড়পত্রে অসামঞ্জস্যতার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন,পুলিশ সুপারসহ ১১ জনকে তলব করেন আদালত।
এর আগে গত ১৭ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে শিশু ধর্ষণের এক ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুর তিনটি মেডিকেল রিপোর্ট ও একটি ছাড়পত্রে অসামঞ্জস্যতার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন, পুলিশ সুপারসহ ১১ জনকে তলব করেন আদালত।
একইসঙ্গে ওই ঘটনায় দুটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেন আদালত। এছাড়া রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় এ ঘটনায় নাসিরনগর থানায় দায়ের করা মামলা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু ও তার পরিবারের সদস্যদেরকে কোনোরকম হয়রানি করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন আদালত।
আদালত এই মামলায় ভুক্তভোগীর (শিশুর) ডাক্তারি পরীক্ষায় কোনো অনিয়ম, অবহেলা বা গাফিলতি হয়েছে কি না, তা উদঘাটনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দ্বারা তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক মাসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম, অবহেলা বা গাফিলতি হয়েছে কি না, তা উদঘাটনের জন্য পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দ্বারা তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে এক মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার বিবরণে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে দেওয়া ছাড়পত্রে বলা হয়েছে, ৩ সেপ্টেম্বর শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়। সেখান থেকে দেওয়া আরেক রিপোর্টে বলা হয়, শিশুটির বাহ্যিক কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে সদর হাসপাতালের মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। তাদেরই আরেকটি তথ্য বলছে, জোরপূর্বক যৌন নির্যাতন হয়েছে।
এজাহার ও নথিপত্র পর্যালোচনা করে আদালত বলেছেন, গত ৪ সেপ্টেম্বর ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ৬ থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভুক্তভোগী শিশুটি নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। চার সদস্যের চিকিৎসকের মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট অনুযায়ী, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যৌন নির্যাতন হয়েছে, বিষয়টি প্রশ্নবোধক।
নথিপত্র থেকে জানা যায়, গত ৯ সেপ্টেম্বর বেলা ৩টায় প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশু (৭) ধর্ষণের শিকার হয়। প্রথমে শিশুটিকে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুটির বাবা গত ১১ সেপ্টেম্বর নাসিরনগর থানায় এক শিশুর (১২) বিরুদ্ধে মামলা করেন। এই মামলায় শিশুটি হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত নভেম্বর শিশুটিকে আট সপ্তাহের আগাম জামিন দেন। একই সঙ্গে তদন্তকাজ শেষে এক মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন আদালত।
এর ধারাবাহিকতায় তদন্ত প্রতিবেদন ও মামলার সিডি (কেস ডকেট) আদালতে দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এসবের ওপর শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেওয়া হয়। আদালতে আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুটির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. শাহ পরান চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনিরুল ইসলাম।
এমএইচডি/ওএফ