আদালতের আদেশের পরও সাতক্ষীরার ব্যবসায়ী সফিউর রহমানকে ঋণ সংক্রান্ত ব্যাংক স্টেটমেন্ট না দেওয়ার ঘটনায় এবি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের এভিপি কে এম আমিনুল ইসলাম ও সাতক্ষীরা ব্র্যাঞ্চের ম্যানেজার মো. সহিদুজ্জামানকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

সোমবার (১৩ জুন) তাদের বরখাস্ত করার বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন এবি ব্যাংকের পরিচালক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার খায়রুল আলম চৌধুরী।

ব্যারিস্টার খায়রুল আলম চৌধুরী বলেন, উচ্চ আদালতের আদেশ না মেনে ব্যাংকের এভিপি কে এম আমিনুল ইসলাম ও সাতক্ষীরা ব্র্যাঞ্চের ম্যানেজার মো. সহিদুজ্জামান এবি ব্যাংকের সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। এ কারণে গত ৮ জুন তাদের দুজনকে এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করেছেন। শুধু তাই নয়, তাদের দুজনের বরখাস্ত করার বিষয়টি সার্কুলারের মাধ্যমে এবি ব্যাংকের প্রত্যেক ব্রাঞ্চ ম্যানেজারকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যেন আর কেউ এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না করেন। সার্কুলারে কোনো গ্রাহক চাইলে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন>> অফিসারদের শেখান গ্রাহককে কীভাবে স্যার বলতে হয় : হাইকোর্ট

এর আগে গত ৫ জুন হাইকোর্ট এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজালকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, আপনার অফিসারদের শেখান কীভাবে গ্রাহকদের স্যার বলতে হয়। গ্রাহকরা যেকোনো প্রতিষ্ঠানের প্রাণ। একজন লুঙ্গি পরা গ্রাহককেও স্যার বলতে হবে। বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

ওইদিন শুনানির শুরুতে আদালতের আদেশের পরও সাতক্ষীরার ব্যবসায়ী সফিউর রহমানকে ঋণ সংক্রান্ত ব্যাংক স্টেটমেন্ট না দেওয়ার ঘটনায় হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবি ব্যাংকের ওই দুই কর্মকর্তা। এ সময় আদালতে এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজাল নিজেও উপস্থিত ছিলেন।

তিনি আদালতে বলেন, আমাদের ব্যাংকের কর্মকর্তারা আদালতের আদেশ মানেননি এজন্য আমি দুঃখিত ও লজ্জিত। আমার বাবা এই আদালতের বিচারপতি ছিলেন (সাবেক প্রধান বিচারপতি এ টি এম আফজাল)। আজ আমার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা হাইকোর্টের আদেশ না মানায় আমার পরিবারও বিব্রত। তাদের বিরুদ্ধে আমরা বিভাগীয় ব্যবস্থা নেব।

এ সময় আদালত কোনো গ্রাহক চাইলে তাকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিতে হবে সব শাখায় এমন সার্কুলার জারি করতে বলেন।

ওইদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী। এবি ব্যাংকের পক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের পরিচালক ব্যারিস্টার খায়রুল আলম চৌধুরী। আইনজীবী হিসেবে ছিলেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ মেহেদি হাসান ও অ্যাডভোকেট আবু তালেব।

গত ৩১ মে এবি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের এভিপি আমিনুল ইসলাম ও সাতক্ষীরা ব্রাঞ্চের ম্যানেজারকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। গুলশান ও সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। ৫ জুন তাদেরকে আদালতে হাজির করতে বলা হয়। তবে আদেশের পর দুই কর্মকর্তা ২ জুন স্বেচ্ছায় হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করতে আসেন।

৩১ মে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, সাতক্ষীরার সফি এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. সফিউর রহমান এবি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। ঋণের বিপরীতে তিনি একটি ব্যাংক স্টেটমেন্ট চান। কিন্তু এবি ব্যাংক থেকে তাকে স্টেটমেন্ট দেওয়া হয়নি। ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিতে তারা অস্বীকার করে। পরে সফিউর রহমান হাইকোর্টে রিট করেন।

তিনি বলেন, রিটের শুনানির এক পর্যায়ে হাইকোর্ট আমাকে এবি ব্যাংকের হেড অফিসে ও সাতক্ষীরা শাখার ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। আমি হেড অফিসের এভিপি আমিনুল ইসলাম ও সাতক্ষীরা ব্রাঞ্চের ম্যানেজারকে আদালতের আদেশের কথা জানিয়ে দেই। তাদের ব্যবসায়ী সফিউর রহমানকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেওয়ার কথা বলি। এছাড়া এভিপি আমিনুল ইসলামকে কোর্টে হাজির থাকার কথা বলেছিলাম। রিটকারী ৩০ মে এবি ব্যাংকের সাতক্ষীরা শাখায় গিয়েছিলেন স্টেটমেন্ট আনতে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা দেয়নি। আদালতের আদেশের পরও ব্যাংক স্টেটমেন্ট না দেওয়ায় তাদের গ্রেপ্তারের আদেশ দেন আদালত।

এমএইচডি/জেডএস