প্রতারক নাছির উদ্দিন বুলবুল ও তার সহযোগী মনির হোসেন

রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার মো. নাছির উদ্দিন বুলবুল (২৯) ও তার সহযোগী মনির হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। বুলবুল স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সহকারী পরিচালক পরিচয় দিয়ে ধরা পড়েন পুলিশের হাতে।

সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোর্শেদ আল মামুন ভূইয়ার আদালতে তাদের হাজির করে রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি শেষে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) শাখা থেকে এ তথ্য জানা যায়।

জিআর শাখা সূত্রে জানা যায়, এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামিকে আদালতে হাজির করেন। একইসঙ্গে সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিলের আবেদন করেন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষ বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক রিমান্ড নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

গত শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন এলাকায় বগুড়া থেকে আসা হবু-শ্বশুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে ধরা পড়েন এসএসএফের ভুয়া সহকারী পরিচালক মো. নাছির উদ্দিন বুলবুল। এ সময় তার সহযোগী মনির হোসেনকেও আটক করে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ।

নাছির উদ্দিন বুলবুল পাবনার আমিনপুর থানার রূপপুরের মো. আব্দুল গফুরের ছেলে। মনির হোসেন (৩২) বাগেরহাট জেলার চিতলমারীর কালিগাতী এলাকার রফিক শেখের ছেলে।

পুলিশ পরে রাজধানীর দারুস সালাম থানাধীন মাজার রোড এলাকার ১৭৭/৫/বি ভবনে ৬ষ্ঠ তলার বাসা থেকে এসএসএফের সহকারী পরিচালক পরিচয়ের ভুয়া আইডি কার্ড জব্দ করে। এছাড়া প্রতারণায় ব্যবহৃত ১৫টি বিভিন্ন কোম্পানির সিম কার্ড, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া পাঁচটি আইডি কার্ড, চারটি ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের পাঁচটি চেকবই, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ২৯টি হাতঘড়ি, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ২১টি সানগ্লাস, ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্লটের দলিলের ফটোকপি ও বিভিন্ন মডেলের পাঁচটি মোবাইল জব্দ করা হয়।

প্রতারক নাছির উদ্দিন বুলবুল ও তার সহযোগী মনির হোসেন | ছবি- ঢাকা পোস্ট

এ ব্যাপারে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার হারুন-অর রশিদ বলেন, বুলবুল নিজেকে এসএসএফের সহকারী পরিচালক পরিচয় দিতেন। কখনও নামীদামি কোম্পানির কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণা করতেন। নিজের এসএসএফের পরিচয় বিশ্বাসযোগ্য করতে তিনি একেকদিন একেক পোশাক ও আলাদা আলাদা ঘড়ি ব্যবহার করতেন। এসব করে উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়েদের সঙ্গে প্রতারণা করতেন। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে প্রতারণা করে বিপুল অঙ্কের নগদ অর্থ হাতিয়ে নেন বুলবুল। তার সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত থাকুক না কেন সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলেও জানান ডিসি হারুন-অর রশিদ।

বগুড়ার এক ব্যক্তির মেয়ের সঙ্গে বিয়ের কথাবার্তা হয় তার। পাত্র হিসেবে তিনি নিজেকে এসএসএফের সিনিয়র সহকারী পরিচালকের পরিচয় দেন। এজন্য তিনি মোবাইল ফোনে পাঠান ভুয়া পরিচয়পত্রও। পরিচয় নিশ্চিত হতে ঢাকায় আসেন মেয়ের বাবা। গণভবনের সামনে গত শনিবার সকালে সাক্ষাৎ করতে বলা হয় তাকে। চতুর বুলবুলের আগেই গণভবনে হাজির হন ওই মেয়ের বাবা। বুলবুল নামে এসএসএফের সিনিয়র সহকারী পরিচালক কেউ আছেন কিনা, খোঁজ নেন তিনি। জানতে পারেন এ নামে কেউ নেই। মনে তৈরি হয় সন্দেহ। বিষয়টি জানান এসএসএফের কর্মকর্তাদের। এরপর বুলবুল সাক্ষাতের জন্য আসছে খবর পেয়ে এসএসএফ শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশকে অবহিত করে। পরে সহযোগী মনিরসহ গণভবনের ২নং ফটক থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বুলবুলকে।

ওই ঘটনায় রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে তার বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় প্রতারণার মামলা হয়েছে। মামলা নং-২৭।

টিএইচ/এমএআর/