সংবাদ প্রকাশের জেরে ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদককে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কায়সার খসরুর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিককে এ তথ্য আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে।

রোববার (২৪ জুলাই) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আরও পড়ুন : টেকনাফের ইউএনও’র ভাষা মাস্তানের চেয়েও খারাপ : হাইকোর্ট

আদালতে ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদককে ইউএনও মোহাম্মদ কায়সার খসরুর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আনেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

তখন আদালত বলেন,  সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ। তারা কোনো ভুল করলে তার জন্য প্রেস কাউন্সিল, আইন আছে। কিন্তু সংবাদ প্রকাশ নিয়ে ইউএনও যে ভাষা ব্যবহার করেছেন তা খুবই অবজেকশনেবল ও দুঃখজনক। তিনি একজন মাস্তানের চেয়েও খারাপ ভাষা ব্যবহার করেছেন।

পরে আদালত সাংবাদিককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার ঘটনায় ইউএনও মোহাম্মদ কায়সার খসরুর বিরুদ্ধে বিভাগীয় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানাতে রাষ্ট্রপক্ষেকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

প্রসঙ্গত, গত ২১ জুলাই ‘নিচু জায়গায় নির্মাণ করা উপহারের ঘর পানিতে ভাসছে’ শিরোনামে ঢাকা পোস্টে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল: ‘কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা হোয়াব্রাং এলাকার সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের সবগুলো নতুন ঘর পানিতে ভাসছে। ফলে সেখানে থাকা ২৭টি পরিবার চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।’

মুজিববর্ষ উপলক্ষে উপহারের ঘরগুলো এমন নিচু জায়গায় করা নিয়ে স্থানীয় লোকজন শুরু থেকেই আপত্তি তুলেছিলেন। তাদের অভিযোগ ছিল, ঘর তৈরিতে মাটির নিচে ইট ব্যবহার করা হয়নি। এ ছাড়া নিম্নমানের ইট, বালি-রড, কাঠ ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। এজন্য তারা দায়ী করেন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে।

এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কায়সার খসরু ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্যা যখন আসছে মুজিববর্ষের ঘরগুলো চেনেনি হয়তোবা ও আশপাশের ঘরগুলো দেখেনি শুধু দেখেছে মুজিববর্ষের ঘরগুলো। একটা চোর, আরেকটা সাংবাদিক, হলুদ সাংবাদিক ও ইয়াবার সঙ্গে জড়িত এমন সাংবাদিক আমাদের ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করছে। এগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি আমরা।’

প্রকাশিত সংবাদে বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরায় ঢাকা পোস্টের কক্সবাজার প্রতিনিধির ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য গালিগালাজ করেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কায়সার খসরু।

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) রাত পৌনে ১০টার দিকে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তার অফিসিয়াল নম্বর থেকে কল করেন ঢাকা পোস্টের কক্সবাজার প্রতিনিধি সাইদুল ফরহাদকে। এ কলের অডিও রেকর্ড রয়েছে ঢাকা পোস্টের কাছে।

পরে শুক্রবার (২২ জুলাই) দুপুরে হিলডাউন সার্কিট হাউসে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের উদ্যোগে কক্সবাজার প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়নের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসময় টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কায়সার খসরু ঢাকা পোস্টের কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধির কাছে অকথ্য ভাষা ব্যবহারের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান।

বৈঠকে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরাও খুবই লজ্জিত। একজন প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তার মুখ থেকে এমন কটুবাক্য আশা করা যায় না। এ সময় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার আশ্বাসও দেন তিনি।

বৈঠকে উপস্থিত কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুল ইসলাম বলেন, তিনি অফিশিয়াল দায়িত্ব পালনরত একজন সাংবাদিকের সঙ্গে যে ভাষায় কথা বলেছেন, তা একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছে আশা করা যায় না। তিনি কক্সবাজার তথা টেকনাফে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। তাকে দ্রুত অপসারণ করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

এমএইচডি/এসএম