বহুল আলোচিত পিলখানা হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের রায় কার্যকরের চূড়ান্ত আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। উচ্চ আদালতের রায়ের পর পেরিয়ে গেছে তিন বছর। এখনও আপিল শুনানির দিন নির্ধারণ না হওয়ায় চলতি বছরের মধ্যে তা শুরু করে নিষ্পত্তি করা যাবে কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন আইনজীবীরা।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের খালাস চেয়ে করা আপিল এবং মৃত্যুদণ্ড বহাল চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল এখন সর্বোচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায়। এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছেন, বহুল আলোচিত মামলাটির বিচার চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে এ বছরই উদ্যোগ নেওয়া হবে।

২০২০ সালের ৭ জানুয়ারি পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম বড় এ মামলার রায় প্রকাশিত হয়। রায় ঘোষণা করা হয় ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর। ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার রায়ে ডিএডি তৌহিদসহ ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট। যেখানে নিম্ন আদালত ১৫২ জনের বিরুদ্ধে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন।

বিডিআর বিদ্রোহে নিহত সহকর্মীর কফিন কাঁধে কান্নায় ভেঙে পড়েন সেনা কর্মকর্তারা

হাইকোর্টের রায়ে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আট আসামির যাবজ্জীবন এবং চারজনকে খালাস দেওয়া হয়। একইসঙ্গে বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন পাওয়া ১৬০ আসামির মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়।

এ বছরই আপিল বিভাগে শুনানি হবে বলে আশা করছি। সুপ্রিম কোর্টের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানি হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চূড়ান্ত আপিল শুনানির দিন নির্ধারণের জন্য আপিল বিভাগে আমরা আবেদন জানাব

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন

বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন পাওয়া আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড নেতা তোরাব আলীসহ ১২ জনকে খালাস দেন উচ্চ আদালত। 

হাইকোর্টের রায় প্রকাশের পর আপিল করেন আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষ। সেই আপিলগুলো এখন সর্বোচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায়। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আট আসামির মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন দিয়েছেন হাইকোর্ট। কয়েকজনকে খালাস দিয়েছেন। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ২০টি আপিল দায়ের করেছি। এটা সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আপিল। প্রায় ৫০ হাজার পৃষ্ঠার। এ কারণে আপিল ফাইল করতে একটু দেরি হয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসেই ফাইল করেছি।’

‘আসামিদের মধ্যে অনেকেই খালাস চেয়ে আপিল ফাইল করেছেন। আমার জানা মতে, আসামিদের মধ্যে ৪৯ জন আপিল দায়ের করেছেন। সবগুলো আপিল চূড়ান্ত শুনানির অপেক্ষায়।’

দ্রুত শুনানির উদ্যোগের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এ বছরই আপিল বিভাগে শুনানি হবে বলে আশা করছি। সুপ্রিম কোর্টের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানি হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চূড়ান্ত আপিল শুনানির দিন নির্ধারণের জন্য আপিল বিভাগে আমরা আবেদন জানাব।’

চূড়ান্ত রায়ে প্রত্যাশার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আপিল শুনানিতে হাইকোর্টের রায় বহালের পাশাপাশি বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সব আসামির সাজা বহাল রাখার আর্জি জানাব।’

প্রধান বিচারপতি শুনানির দিন এখনও নির্ধারণ করেননি। শুনানি শুরু হলে বলা যাবে কত সময় লাগবে। তবে এ বছর সম্ভব নাও হতে পারে

আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম

আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ৪৯ আসামির পক্ষে আপিল দায়ের করেছি। এখন নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক আসামির ক্ষেত্রে মামলার সারসংক্ষেপ তৈরি করা হবে। প্রধান বিচারপতি শুনানির দিন নির্ধারণ করবেন। আমরা আপিল বিভাগে আসামিদের পক্ষে যুক্তিতর্ক তুলে ধরব। আশা করি আপিল বিভাগে ন্যায়বিচার পাব।’

চলতি বছর আপিল নিষ্পত্তি সম্ভব কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি শুনানির দিন এখনও নির্ধারণ করেননি। শুনানি শুরু হলে বলা যাবে কত সময় লাগবে। তবে এ বছর সম্ভব নাও হতে পারে। 

হত্যাকাণ্ডের দিন পিলখানায় টহলরত বিডিআর জওয়ানরা

বিচারপতি মো. শওকত হোসেন, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর পিলখানা হত্যা মামলার রায় দেন। রায় ঘোষণার দুই বছরের বেশি সময় পর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে নিম্ন আদালতের দেওয়া ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া যাবজ্জীবন দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আর ২০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। খালাস পান ৪৫ জন।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহের নামে পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে ঘটে নারকীয় হত্যাকাণ্ড। ওই ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। বিচারের মুখোমুখি করা হয় ৮৪৬ বিডিআর জওয়ানকে। মামলার অন্য চার আসামি বিচার চলাকালে মারা যান।

২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর এ মামলায় ১৫২ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুর আদেশ দেন বিচারিক আদালত। তাদের একজন ছাড়া সবাই তৎকালীন বিডিআরের সদস্য। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় ১৬১ জনকে। সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পান আরও ২৫৬ জন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পান ২৭৮ জন। সাজা হয় মোট ৫৬৮ জনের।

এমএইচডি/এসএম/এমএআর