২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ইতিহাসের কলঙ্কিত দিন। এদিন ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে বিডিআর সদস্যরা। এ ঘটনায় দুটি মামলার মধ্যে হত্যা মামলার বিচার নিষ্পত্তি হয়েছে। তবে বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলা দীর্ঘ ১২ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। ফলে হত্যা মামলায় খালাস পেলেও মুক্তি মেলেনি ২৮৭ আসামির। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আশা, চলতি বছর মামলাটির নিষ্পত্তি সম্ভব।

বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার তিনদিন পর (২৮ ফেব্রুয়ারি) লালবাগ থানায় মামলা দুটি দায়ের করা হয়। এরপর তা নিউ মার্কেট থানায় স্থানান্তর করা হয়। হত্যা মামলার তদন্ত শেষে ২৩ বেসামরিক ব্যক্তিসহ প্রথমে ৮২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে সিআইডি। পরে সম্পূরক অভিযোগপত্রে আরও ২৬ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করায় আসামির সংখ্যা ৮৫০ জনে দাঁড়ায়। 

এছাড়া বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ৮০৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। পরে আরও ২৬ জনকে অভিযুক্ত করে মোট ৮৩৪ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

হত্যা মামলার রায়ে ২৭৮ জন খালাস পেলেও বিস্ফোরক আইনের মামলায় তারা আটকে গেছেন। এ মামলায় (বিস্ফোরক) তারা জামিনও পাচ্ছেন না। তারা যদি বিস্ফোরক আইনের মামলা থেকে খালাস পান তাহলে তো শুধু শুধুই সাজা খাটল। তাদের জীবনের মূল্যবান এ সময় আর ফিরে আসবে না। তাই ন্যায় বিচারের স্বার্থে আসামিদের জামিনে মুক্তি দেওয়া উচিত

আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ

বিস্ফোরক আইনের মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। এ মামলায় আসামি ৮৩৪ জন। এর মধ্যে একজন সিভিলিয়ান, বাকিরা বিডিআরের জওয়ান। আসামিদের মধ্যে ২৪ জন মারা গেছেন। জীবিত আছেন ৭৯০ জন। পলাতক ২০ জন।

মামলায় ১৮৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। সোমবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) এ মামলায় চারজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিচারক পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২৩ ও ২৪ মার্চ দিন ধার্য করেছেন।

এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘গত ১২ বছর ধরে মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। মামলাটিতে এখন পর্যন্ত সর্বমোট ১৮৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। সোমবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) এ মামলায় চারজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিচারক পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২৩ ও ২৪ মার্চ দিন ধার্য করেছেন।’

আমরা আশা করি ৩০০-৩৫০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করে চলতি বছরেই আদালত মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ করে রায় ঘোষণা করতে পারবেন

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল

তিনি আরও বলেন, ‘হত্যা মামলার রায়ে ২৭৮ জন খালাস পেলেও বিস্ফোরক আইনের মামলায় তারা আটকে গেছেন। এ মামলায় (বিস্ফোরক) তারা জামিনও পাচ্ছেন না। তারা যদি বিস্ফোরক আইনের মামলা থেকে খালাস পান তাহলে তো শুধু শুধুই সাজা খাটল। তাদের জীবনের মূল্যবান এ সময় আর ফিরে আসবে না। তাই ন্যায় বিচারের স্বার্থে আসামিদের জামিনে মুক্তি দেওয়া উচিত।’

ফারুক আহমেদ বলেন, ‘এ মামলায় গত বছর ৭৮৩ নম্বর আসামি আতিকুল ইসলামকে হাইকোর্ট জামিন দেন। আমরা জামিননামা দাখিলও করি। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ জামিন স্থগিতের আবেদন করলে হাইকোর্ট তার জামিন স্থগিত করে দেন।’

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এই মামলায় সর্বমোট ১৮৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। আমরা আশা করি ৩০০-৩৫০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করে চলতি বছরেই আদালত মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ করে রায় ঘোষণা করতে পারবেন।’

২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর হত্যা মামলায় ঢাকার নিম্ন আদালত ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিলের রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। ৮ জনের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও চারজনকে খালাস দেওয়া হয়। নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়। হাইকোর্টে আপিল চলার সময় কারাগারে থাকা দুজনের মৃত্যু হয়। খালাস পান ১২ আসামি।

টিএইচ/এইচকে/এমএআর