অর্পিত সম্পত্তির মামলায় মূল মালিকদের ক্ষতিপূরণসহ হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের কয়েকটি মতামত ও নির্দেশনা বাতিল করে রায় প্রকাশ করেছেন আপিল বিভাগ।

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধান চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ সম্প্রতি ৩৪ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করেন। শনিবার (২০ আগস্ট) জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ রায় প্রকাশের বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর অর্পিত সম্পত্তি আইন চালেঞ্জ করে সাবেক সরকারি কর্মমর্তা আবদুল হাই জনস্বার্থে একটি রিট দায়ের দায়ের করলে আদালত রুল জারি করেন। রুলের শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল নিষ্পত্তি করে মতামত ও নির্দেশনা দেন যে, ভবিষ্যতে আর কোনো সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত করা যাবে না, প্রতিটি জেলায় সম্পত্তি অর্পিত নিষ্পত্তির জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করা, প্রতি জেলায় আপিল ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা, ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক নির্দিষ্ট সময় মামলা নিষ্পত্তি করা, মামলা ফাইলের ক্ষেত্রে তামাদি আইন প্রয়োগ করা, ট্রাইব্যুনাল বা আপিল ট্রাইব্যুনালের রায় নির্দিষ্ট সময় বাস্তবায়ন করা, সরকারের দখলে থাকা দাবিহীন অর্পিত সম্পত্তি মানুষের উন্নয়নে ব্যবহার করা, প্রয়োজনীয় আইন করে যে সম্পত্তিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সেগুলোর নামকরণে মূল মালিককে অন্তর্ভুক্ত করা, যে সব অর্পিত সম্পত্তি অপ্রত্যাপনযোগ্য সেইক্ষেত্রে মালিককে আইন করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া। 

এই রায়ের বিরুদ্ধে ভূমি মন্ত্রণালয় আপিল দায়ের করে এবং শুনানি শেষে গত ২ জুন তারিখে আপিল বিভাগ রায় প্রদান করেন। সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশিত হয়েছে। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দকী, বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান, বিচারপতি বোরহানউদ্দিন এবং বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম ওই রায় দেন।

আপিল বিভাগ রায়ে বলেছেন, ২০০১ সালে অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে প্রণীত আইনে ট্রাইব্যুনাল গঠন, নির্দিষ্ট সময় মামলা নিষ্পত্তি, তামাদি আইন প্রয়োগ, ডিক্রি বাস্তবায়ন, আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠন, অর্পিত সম্পত্তি উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার ইত্যাদি সংক্রান্ত বিধানগুলো রয়েছে। রায়ে বলা হয়, আদালত কোনো আইন করার বিষয় ম্যানডামাস ইস্যু করতে পারে না, সরকারের নিকট ন্যাস্ত সম্পত্তির বিষয় সরকারের ওপর আইন করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আদালত রায়ে আরও বলেন, ভবিষ্যতে আর কোনো সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত না করার বিষয় নির্দেশনা নিরর্থক, কারণ আপিল বিভাগ ইতিপূর্বে দেওয়া রায়ে ১৯৭৪ সালের ২৩ মার্চের পরে অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্তি বে-আইনি ঘোষণা করেছেন। আপিল বিভাগ ওই পর্যবেক্ষণ দিয়ে হাইকোর্টের মতামত ও নির্দেশনা বাতিলপূর্বক আপিল নিষ্পত্তি করে রায় দেন।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, এ রায়ের মাধ্যমে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। যদি মূল মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হতো তাহলে হাজার হাজার একর অর্পিত সম্পত্তি যা সরকারের দখলে আছে সে সব সম্পত্তির মূল্য বাবদ হাজার হাজার কোটি টাকা অর্থ পরিশোধ করতে হতো।

এমএইচডি/এসএম