ঋণ জালিয়াতির ২৬ মামলায় জড়ানোর ঘটনায় পাটকল শ্রমিক জাহালমকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫ লাখ টাকা দিয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক।

বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনে ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জাহালম ও তার পরিবারের কাছে ৫ লাখ টাকা হস্তান্তর করে। ব্যাংকের আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।

গত ৭ আগস্ট জাহালমকে মামলায় ফাঁসানো সম্পর্কিত হাইকোর্টের রুলের নিষ্পত্তি করে দেওয়া রায় প্রকাশ করা হয়। ওই রায়ে জাহালমকে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ রয়েছে। ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এ রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

ক্ষতিপুরণের ওই ১৫ লাখের মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা ৭ দিনের মধ্যে দিয়ে দিতে গত ২৯ আগস্ট ব্র্যাক ব্যাংককে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। সে অনুযায়ী ব্যাংকের পক্ষ থেকে আজ জাহালমকে ৫ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়।

৭ আগস্ট প্রকাশিত রায়ে হাইকোর্ট বলেন, দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা যথাযথভাবে তার দায়িত্ব পালন করেনি। তদন্ত রিপোর্টেও এটা উঠে এসেছে। কিন্তু সব দেখে মনে হয়েছে তার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না। এখানে দুদকের ৩১ ধারা (সরল বিশ্বাসের ভুল) প্রযোজ্য। যদিও তারা অদক্ষ ও অযোগ্য। কিন্তু আমরা ওই অফিসারদের প্রতি ক্ষতিপূরণ আরোপ করছি না। এখানে সালেকের জায়গায় জাহালমকে জড়ানোর কোনো উদ্দেশ্য দেখছি না।

দুদকের বিষয়ে হাইকোর্ট বলেন, দুদক একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে গঠিত স্বাধীন কর্তৃপক্ষ। আইন ও বিধি অনুসারে তাদের তদন্ত কার্যক্রম চালাবে এবং ভবিষ্যতে কোনো মামলায় কোনো ব্যক্তিকে এ ধরনের ভুলভাবে যেন না জড়ানো হয় সে ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে।

এ রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে ব্র্যাক ব্যাংক।

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না...’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত।

এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা, মামলার বাদীসহ চারজনকে তলব করেন হাইকোর্ট। এছাড়া রুলও জারি করেন আদালত।

পরে একই বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্টরা হাজির হওয়ার পর হাইকোর্ট জাহালমকে মুক্তির নির্দেশ দেন এবং দুদকের কাছে ঘটনার বিষয়ে হলফনামা আকারে জানতে চান। সে আদেশ অনুসারে দুদক হলফনামা আকারে তা উপস্থাপন করে।

পরে জাহালম প্রশ্নে ব্যাংক ঋণ জালিয়াতির ৩৩ মামলার এফআইআর, চার্জশিট, সম্পূরক চার্জশিট এবং সব ব্যাংকের এ সংক্রান্ত নথিপত্র দাখিল করতে দুদককে নির্দেশ দেন।

এর ধারাবাহিকতায় হাইকোর্ট ২০২০ সালের ১৭ এপ্রিল জাহালমকাণ্ডে কে বা কারা দায়ী তা দেখার জন্য এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিবেদন চেয়েছিলেন। পরে এসব মামলায় দুদক, ব্র্যাক ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়।

২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রুলের ওপর শুনানি শেষ হয়। একই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। রায়ে ব্র্যাক ব্যাংককে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার এক মাসের মধ্যে ১৫ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন। টাকা পরিশোধ করে এক সপ্তাহ পর রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

এ ঘটনায় দুদকের পদক্ষেপ নিয়ে উচ্চ আদালত বলেন, দুদকের আইনজীবী প্রতিবেদন দিয়ে জানিয়েছেন- এ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত করে ১১ জনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

ব্যাংক কর্মকর্তাদের সম্পর্কে আদালত বলেন, তদন্ত রিপোর্টে দেখা যায়, বিশেষত ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা সালেকের জায়গায় জাহালমকে এনেছে। তাদের এ কার্যক্রম তদন্ত কর্মকর্তাকে ভুলপথে পরিচালিত (মিসগাইড) করেছে। আর তারা ইচ্ছা করে এ কাজ করেছে।    

এমএইচডি/এসএম