২০২০ সালের মার্চে মহামারি করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় থমকে যায় জনজীবন। করোনাভাইরাস রোধে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। বন্ধ হয়ে যায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত। দীর্ঘ ছুটির মধ্যে বিচারকাজ থেমে যাওয়ায় ভার্চুয়াল আদালতের ভাবনা গতি পায়। অবশেষে ২০২০ সালের ৯ মে রাষ্ট্রপতি আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ জারি করলে বিচার বিভাগের ইতিহাসে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হয়। ১০ মে থেকে ভার্চুয়ালি আদালতে বিচারকাজ শুরু হয়। 

পরে ভিডিও কনফারেন্সসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার বিল-২০২০ পাস করে সরকার। ফলে করোনাকালে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ। তবে মহামারি করোনা কেড়ে নেয় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, একজন জেলা জজসহ বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট অনেক মানুষের প্রাণ।

করোনাকালীন এক বছর সময়ের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া যে আদালত চলতে পারে এ বিষয়ে আগে আমাদের কোনো ধারণা ছিল না। করোনা পরিস্থিতিতে আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার বিল পাস হওয়ার ফলে বিচার বিভাগ ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে। এখন নানা প্রান্ত থেকে শারীরিক উপস্থিতি ছাড়াই মামলার শুনানি হচ্ছে। এটা অবশ্যই বড় অর্জন। করোনা চলে গেলেও দেশের যেকোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে ভার্চুয়ালি আদালত পরিচালনা করা যাবে। তবে কষ্টের বিষয় হচ্ছে, করোনাকালীন আমরা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ব্যারিস্টার রফিক উল হক, একজন জেলা জজ, আইনজীবী ইদ্রিসুর রহমান, আইনজীবী সাজোয়ার হোসেনসহ বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট অসংখ্য ব্যক্তিকে হারিয়েছি। যে ক্ষতি সহজে পূরণ হওয়ার নয়।’

করোনা ঝুঁকি থাকায় এখনও আপিল বিভাগ ও হাইকোর্টের ৩৫ বেঞ্চে ভার্চুয়ালি বিচারকাজ চলছে। আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার আইন পাসের কারণে ভবিষ্যতেও দেশের যেকোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে শারীরিক উপস্থিতি ছাড়াই ভার্চুয়ালি আদালত পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।  

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির তথ্যমতে, মহামারি করোনার বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শতাধিক সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন। বার্ধক্যজনিত কারণ, করোনায় আক্রান্ত ও নানাবিধ অসুস্থতায় এসব আইনজীবী পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরে ইহলোক ত্যাগ করা এসব আইনজীবীর মধ্যে রয়েছেন সাবেক দুই অ্যাটর্নি জেনারেল। রয়েছেন সর্বোচ্চ আদালতের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিও।

এর মধ্যে ২০২০ সালের মার্চে মারা গেছেন মোহাম্মদ ইসমাইল, বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবী মো. সানা উল্লা মিয়া, দোলোয়ার হোসেন সরকার, মো. আব্দুর রহিম খান ও সৈয়দ আবদুস সালাম। এপ্রিলে মৃত্যুবরণ করেছেন জিয়াউর রহমান, মুজিবুর রহমান মিয়া, সেখ মনিরুজ্জামান ও মো. ফারুক আহমেদ সিদ্দিক।

মমতাজ বেগম, এ বি এম বদরুদ দৌলাহ, মো. আবদুল ওয়াদুদ, শাহ আলম সরকার, সঞ্চিতা সাহা, সহিদ উল্লাহ শেখ, মকবুল হোসেন, আবুল কাশেম চৌধুরী, মো. ফজলুল করিম, মো. জহিরুল ইসলাম, মো. আবদুস সাত্তার, এ এইচ আবদুর রহমান চৌধুরী ও এস এম জাহিদুর রহমান মে মাসে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

জুনে এম এ কে গোলাম মহিউদ্দিন, এম বি তাজ মোহাম্মদ, মহিউদ্দিন আহমেদ, আবদুল লতিফ পালোয়ান, মো. রেজাউল করিম হেলাল, আবদুল মান্নান, মো. ওসমান গনি, মো. ইদ্রিসুর রহমান, মতিউর রহমান, আবু বকর সিদ্দিক, একরামুজ্জামান, হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া, সায়েদুল হক, লিয়াকত আলী এবং আবু জাফর মো. মহিউদ্দিন মৃত্যুবরণ করেছেন।

এ ওয়াই এম নাজিমুল আলম, সাবেক মন্ত্রী সাহারা খাতুন, এস এম ইমদাদুর রহমান, সৈয়দ মতিউল ইসলাম, মো. একরামুল হক, মো. আবুল হারুন, দেওয়ান শরিফ উদ্দিন, মো. আলী হোসেন সোহেল, ড. মো. এনামুল হক, মো. ইকবাল হোসেন, আজিজুর রহমান, খালেদা সরকার ও মো. ওয়াজিদুল ইসলাম গত জুলাইতে মারা যান।

২০২০ সালের আগস্টে এস এম নুরুল হক, এম এ মান্নান, নেয়ামত উল্লাহ, আবদুল লতিফ মিয়া, মো.আবদুল মজিদ, এম এ খালেক, কুমিল্লার সাবেক সংসদ সদস্য এটিএম আলমগীর, মো. হাবিবুর রহমান শওকত, আহমদ হোসেন, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল কে এস নবীর ছোট ছেলে কাজী সিরাতুন নবী, মো. মীর হোসেন, মো. শরীফ হোসেন এবং মো. ময়েজ উদ্দিন মৃত্যুবরণ করেন। 

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, মনসুর হোসেন, মো. মিজানুর রহমান মোল্লা, মো. আবদুল হালিম, আবুল কালাম মাইনুদ্দিন, মো. নুরুল হোসেন, এ কে এম সালা উদ্দিন কবির, মো. মতিউর রহমান, সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, স্নেহাশীষ সমাদ্দার, আসিফ ইমতিয়াজ খান ও মো. আফতাব আলী গত সেপ্টেম্বর মাসে মৃত্যুবরণ করেন।

অক্টোবর মাসে মৃত্যুবরণ করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল রফিক-উল হক, আনসার আলী শেখ, মো. আবদুর রেজ্জাক মিয়া, কাজী সাজাওয়ার হোসেন, মো. আনিসুজ্জামান, এ কে এম খালেক, নেওয়াজ ফরাজি, রফিকুল ইসলাম খন্দকার, আসিফ আহমেদ মুরাদ, কাজী রকিবুল ইসলাম, মো. আয়াত আলী পাটোয়ারী, মো. আবদুস সহিদ চৌধুরী, ফকির দেলোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন, নাজমুল হক শাহ চৌধুরী, মো. মুজিবুল হক মুন্সি ও মো. হাফিজ-উর রহমান। 

মো. এনামুল হক খান, খালেদা পান্না, এনায়েত হোসেন খান, মো. জাহিদ হোসেন, কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত শওকত আলী, মো. মনিরুল ইসলাম, আবদুল কাইয়ুম, মো. নাজমুল হক, মো. সোলাইমান হোসেন গত নভেম্বরে মারা যান। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মৃত্যুবরণ করেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আবু সাইদ আহমেদ, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. আবদুল আউয়াল মিয়া ও মো. ওসমান গনি।

এমএইচডি/এইচকে/এমএমজে