বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি রক্ষা, মর্যাদা পুনরুদ্ধারের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণসহ একগুচ্ছ দাবি নিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের (বিজেএএফ) নেতারা। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় জড়ানোর নালিশও করেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।

মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেলে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করে বিজেএএফ নেতারা লিখিত দাবি-দাওয়া পেশ করেন।

সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেলি এবং বিজেএএফ সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রধান বিচারপতির দপ্তরে প্রবেশ করেন। এসময় বিপুল সংখ্যক বিএনপিপন্থী আইনজীবী বাইরে ছিলেন।

আরও পড়ুন>>প্রধান বিচারপতির বিদায় সংর্বধনা: বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের বিক্ষোভ

লিখিত আবেদনের মাধ্যমে বিজেএএফ বিচার বিভাগের মর্যাদার ওপর আসা ধারাবাহিক অবমাননাকর প্রভাবের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। 

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের লিখিত আবেদনে বলা হয়, ২০০৭ সালে শুরু হওয়া ক্ষমতার সুস্পষ্ট নতুন রূপের অবাস্তব সংস্কার, বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণ-আধিপত্য এবং উচ্চ আদালত ও অধস্তন আদালতে বিচারক নিয়োগে ক্রমবর্ধমান রাজনীতিকরণ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতাকে আরও খর্ব করেছে। এর ফলে বিচার বিভাগকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং দক্ষ হিসাবে বিবেচনা করা হয় না। পাশাপাশি এর প্রতি জনগণের আস্থা কমে গেছে।

সারাদেশে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা নিপীড়ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সারাদেশে প্রায় ৪০ লাখ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে প্রায় এক লাখ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় জড়ানো হয়েছে। এই ধরনের রাজনৈতিক মামলাগুলো ‘রাজনৈতিক নিপীড়ন’ উৎকৃষ্ট উদাহরণ ছাড়া আর কিছুই নয়। রাজনৈতিক বিরোধীদের নিপীড়ন ও বিচার করার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা বিচার ব্যবস্থার এই ধরনের উদ্বেগজনক ব্যবহার, সংবিধানের মৌলিক অধিকারের একটি পরিহাসমূলক লঙ্ঘন এবং বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি, পবিত্রতা ও মর্যাদার ভূলণ্ঠন।

আরও পড়ুন>>সুপ্রিম কোর্টে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের বিক্ষোভ

সরকার চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমন করার জন্য বিচার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করছে, যার ফলে বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা হ্রাস পাচ্ছে। আবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো দ্বারা প্রকাশিত তথ্যের আলোকে প্রধান বিচারপতির কাছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের দাবিগুলো হলো—  

১. বিচারব্যবস্থার প্রতি জনসাধারণের উপলব্ধি, বিশ্বাস এবং আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য যেন এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়, যাতে প্রমাণিত হয় বিচার বিভাগ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত। 

২. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ সালের অধীনে মামলাসহ রাজনৈতিক মামলাগুলো এমনভাবে পরিচালনা/বিচার করা যাতে বিচার বিভাগের ওপর জনগণের বিশ্বাস এবং আস্থা ফিরে আসে। 

৩. আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো আমলে নিয়ে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি, মর্যাদা এবং সম্ভ্রম পুনরুদ্ধারের জন্য যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণ করা।

এমএইচডি/কেএ