মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে টাঙ্গাইলের দুই রাজাকারের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) ধানমন্ডির তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির কো-অর্ডিনেটর এম সানাউল হক।

দুই আসামির মধ্যে একজন ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর রমনা রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি হানাদর বাহিনীর সঙ্গে যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতের কারাগারে বন্দি ছিলেন। পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের নাগরিকত্ব নিয়ে ২০০২ সালে দেশে ফিরে আসেন।

এটি তদন্ত সংস্থার ৮৭তম প্রতিবেদন। এ মামলায় আসামিরা হলেন, টাঙ্গাইল গোপালপুর উপজেলার বেড়াডাকুরী গ্রামের সবুর মাস্টারের ছেলে রাজাকার কমান্ডার কোহিনুর ওরফে মনিরুজ্জামান কোহিনুর (৭০)।

অপরজন হলেন, গোপালপুর উপজেলার চাতুটিয়ার ছবর আলীর ছেলে রাজাকার আলমগীর ওরফে শা আ ম আলমগীর তালুকদার (৬৭)। রাজাকার আলমগীরের রাজনৈতি পরিচয়ে বলা হয়েছে, তিনি জামায়াতের সমর্থক। এই দুই আসামি গত ৩ মার্চ থেকে গ্রেপ্তার হয়ে জেল হাজতে রয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে কোহিনুর রাজাকার সম্পর্কে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলে কাদেরিয়া ও ভারতীয় তথা যৌথ বাহিনীর অভিযানে টাঙ্গাইল জেলা মুক্ত হয়। টাঙ্গাইল জেলা আলবদর কমান্ডার মনিরুজ্জামান কোহিনুর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে পশ্চাৎপসারণ করে ঢাকায় আশ্রয় নেয়। ১৬ ডিসেম্বর রমনা রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি হানাদর বাহিনীর সঙ্গে যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। ১৯৭৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সে খাঁন সেনাদের সঙ্গে ভারতের জব্বলপুর কারাগারে বন্দি ছিলেন। শিমলা চুক্তি অনুযায়ী ভারতের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে পাকিস্তানে আশ্রয় নেয় এবং পাকিস্তানের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে। পাকিস্তানের নাগরিক হিসেবে সে জাপান যায়। ২০০২ সালে একটি মহলের যোগসাজশে কৌশলে বাংলাদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণ করে বাংলাদেশে আসে। রাজনৈতিক পরিচয়ে জানা যায় তিনি মুসলিমলীগের সমর্থক।

এই দুই আসামির বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে
প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৮ জুন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মুসলিম উদ্দিন মিয়া ওরফে মুসলিম মাস্টারকে রাজাকার কোহিনুর এবং তার সহযোগী রাজাকাররা নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন ও হত্যা করে লাশ গুম করেছে।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট রাজাকার কোহিনুর অন্যান্য রাজাকারসহ পাকিস্তানি আর্মিদের সঙ্গে নিয়ে মুসলিম মাস্টারের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। একই দিন মুসলিম মাস্টারের শ্বশুড়বাড়ি গিয়ে তার দুই মেয়েকে আর্মিদের হাতে তুলে দিতে বলে। তাদের না পেয়ে ওই বাড়ি থেকে আবুল মনসুর মোহাম্মদ মাজহারুল হাসান তালুকদার নামে একজনে তুলে নিয়ে যায়। ১১ ডিসেম্বর তাকে কাদেরিয়া বাহিনী ক্যান্টনমেন্ট থেকে উদ্ধার করে।

তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রাজাকার কোহিনুর ও আলমগীর হানাদার বাহিনীর সহায়তায় শাহীন হাওলাদার, শহীদ দুদু ফকির, শহীদ আমজাত ফকিরদের তাদের বাড়িতেই গুলি করে হত্যা করে এবং মোছা. সমলা বেগমকে উরুতে গুলি করে জখম করে। এরপর তারা বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করে এবং যাকে যেখানে পায় গুলি করে। মুক্তিযোদ্ধারা মনে করে, তারা ৪/৫ জন নিরস্ত্র লোকে গুলি করে হত্যা করেছে।

একইদিন তারা মাহমুদপুর থেকে পানকাতা গ্রামের উত্তর প্রান্ত পর্যন্ত নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ১৭ জন নিরহী গ্রামবাসীকে হত্যা করে এবং ২৫/৩০টি বাড়ির মালামাল লুট করে অগ্নি সংযোগ করে।

এমএইচডি/এসএম