চট্টগ্রামে শিশুকে বলাৎকারের মামলায় মশিউর রহমান (২৬) নামে এক যুবককে জামিন দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রবিউল আলম তাকে জামিন দেন। 

এর আগে ভুক্তভোগী শিশুর বড় ভাই ও মামলার বাদী অভিযুক্তকে জামিন দিতে কোনো আপত্তি নেই বলে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতকে অবহিত করেছিলেন।

আবার জামিনের পর অঙ্গীকারনামা দিলে মামলা তুলে নিতেও আপত্তি নেই বলে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন মামলার বাদী আরফাতুল ইসলাম। যদিও আইনজীবীরা বলছেন, এ ধরনের মামলা আপসযোগ্য নয়। আবার পুলিশ বলছে, মেডিকেল প্রতিবেদন পেলে আদালতের নির্দেশনায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

আদালত ও মামলার এজাহার সূত্র জানায়, ভুক্তভোগী শিশু ১৪ বছর বয়সী। সে পরিবারের সঙ্গে চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট এলাকায় থাকে। অভিযুক্ত মশিউরের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার হরেশপুর এলাকায়। তার বাবার নাম সিরাজুল ইসলাম। তিনি নগরের চান্দগাঁও থানার রাহাত্তারপুল এলাকায় থাকেন।

ঘটনার দিন ১৬ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগী শিশু বিকেলে বাসা থেকে হাঁটতে বের হয়। হাঁটতে হাঁটতে সে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারে ওঠে। সেসময় ফ্লাইওভারে মোটরসাইকেলে চড়ে যাচ্ছিলেন অভিযুক্ত মশিউর। তিনি শিশুটিকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে মোটরসাইকেলে তোলেন। কিন্তু ভুক্তভোগীকে বাড়িতে না পৌঁছিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় খুলশী থানার আমবাগান এলাকায়।

ওই এলাকার গার্লস স্কুলের পাশে রেলওয়ের কোয়ার্টারের একটি কক্ষের ভেতরে শিশুকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে জোরপূর্বক  বলাৎকার করা হয়। পরে ভুক্তভোগী শিশুকে মোটরসাইকেলে করে কাজির দেউরি এলাকায় নামিয়ে দেন মশিউর। এরপর ওই শিশু একা বাড়িতে ফিরে আসে এবং পরিবারের সবার কাছে বিষয়টি খুলে বলে। এ ঘটনায় ১৮ সেপ্টেম্বর খুলশী থানায় ভুক্তভোগীর বড় ভাই আরফাতুল বাদী হয়ে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করে। মামলায় একমাত্র আসামি করা হয় মশিউরকে। ঘটনার পরপরই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করে। একই সঙ্গে ভুক্তভোগী শিশুটির কাছ থেকে নারী ও শিশু আইনের ২২ ধারায় আদালতে জবানবন্দি নেওয়া হয়।

এদিকে গ্রেপ্তারের পর মশিউরের পরিবার ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকে। এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না মর্মে ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছে তারা অঙ্গীকার করে। একপর্যায়ে রাজি হয়ে যান মামলার বাদী আরফাতুল। তিনি আসামি মশিউরের জামিনে আপত্তি নেই বলে হাজির হয়ে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজকে অবহিত করেন। যদিও এসবের পরও মহানগর দায়রা জজ আদালতে মশিউরের জামিন মেলেনি। তবে সম্প্রতি মশিউরকে জামিন দিতে আদেশ দেন হাইকোর্ট। সেই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত মশিউরকে জামিন দেন।

মামলায় জামিনের ক্ষেত্রে আপস করার বিষয়ে জানতে চাইলে বাদী আরাফাতুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মশিউরের স্ত্রী এবং তার পরিবারের সদস্যরা আমাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। ঘটনার সময় তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বলে জানিয়েছেন। তার পরিবারের দিকে তাকিয়ে আমি জামিনের জন্য আপস করেছি।

মামলা খালাসের ক্ষেত্রেও আপস করবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, যদিও মশিউর বের হয়ে এ ধরনের কাজ আর করবে না মর্মে অঙ্গীকার করে, তাহলে আপস করতে পারি।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (ক) ধারায় দায়ের হওয়া মামলাটি আপসযোগ্য কি না, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান খাঁনের কাছে তা জানতে চাওয়া হয়। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে একমাত্র যৌতুক (১১-গ) ছাড়া সব ধারাই আপসযোগ্য নয়। ধর্ষণের মতো চাঞ্চল্যকর ঘটনার মামলাটি কোনোভাবেই আপসযোগ্য হবে না।

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও খুলশী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দিপলু কুমার বড়ুয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ ধরনের মামলায় আপস করার সুযোগ নেই। আমি এখনো মেডিকেল প্রতিবেদন হাতে পাইনি। পেলে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে প্রতিবেদন দেবো। বাদী আপস করলে বিষয়টি আদালতে অবহিত করব। এরপর আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিবেদন দেবো।

মিজানুর/কেএ