ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুজন দিনমজুরকে কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনায় খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোন্দকার ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাতকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার আদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার দিনমজুর আবুল কালাম ও রুহুল আমিনকে দেওয়া সাজা কেন অবৈধ হবে না ও তাদেরকে কেন ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, এই মর্মে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।

সোমবার (৯ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

আদালতের আদেশের বিষয়টি ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুজন দিনমজুরের কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনায় খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোন্দকার ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাতকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা থেকে বিরত রাখতে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত না করে আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত।

গত বছরের ২০ নভেম্বর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার দিনমজুর আবুল কালাম ও রুহুল আমিনকে দেওয়া সাজা কেন অবৈধ হবে না ও তাদেরকে কেন ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুজন দিনমজুরের কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনায় খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোন্দকার ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাতকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা থেকে বিরত রাখতে নির্দেশ দেন আদালত। জনপ্রশাসন সচিব ও খাগড়াছড়ির ডিসিকে এই নির্দেশ কার্যকর করতে বলা হয়।

সে সময় বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি মো. আক্তারুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। 

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম এম জি সারোয়ার পায়েল।

পরে ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আদালত রুল জারির পাশাপাশি খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলা ইউএনও খোন্দকার ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাতকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার দায়িত্ব থেকে বিরত রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে পারবেন না।
 
গত ২৩ অক্টোবর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুজন দিনমজুরের কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনায় খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলা ইউএনও খোন্দকার ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাতের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা কেড়ে নিতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। রিটে ওই দুই দিনমজুর আবুল কালাম ও রুহুল আমিনকে ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়। আবুল কালাম ও রুহুল আমিন এ রিট দায়ের করেন।

আইন সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, খাগড়াছড়ির ডিসিসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়েছে।

গত ৫ আগস্ট দৈনিক আজকের পত্রিকায় ‘প্রশাসন-বিজিবি বিরোধ : কারাগারে দিনমজুর’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, জমি নিয়ে বিরোধ চলছে খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলা প্রশাসন ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মধ্যে। আর সেই বিরোধের সাথে-পাঁচে না থেকেও কারাগারে যেতে হলো দুই দিনমজুরকে। গত ১ আগস্ট রামগড় উপজেলা প্রশাসন ও বিজিবি বিরোধপূর্ণ জায়গায় বেড়া দেওয়ার কাজ করতে গেলে ইউএনও খোন্দকার ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত দুজন দিনমজুরকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড দেন। এ সময় তিনি দিনমজুর দুজনকে পাঁচ দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। দুজন দিনমজুর হলেন- অফিস টিলার আবুল কালাম ও দারোগা পাড়ার রুহুল আমিন।

এর আগে গত বছর এ জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইয়াসিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দেওয়ায় তিনি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেখিয়ে কারাদণ্ড দেন নিরীহ দিনমজুর আলী আহাম্মদকে। গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর আলী আহাম্মদ দিনমজুরকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে নিজের গাড়িতে করে থানায় নিয়ে যান ইউএনও। পরে রাতে এক আদেশে তাকে এক মাসের কারাদণ্ড দেন। মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারের হতদরিদ্রদের ঘর নির্মাণের নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ দেন খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার ময়ুরখীল গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর আলী আহাম্মদ। এবার আরেক ইউএনওর প্রতিশোধের বলি হয়ে জেলে গেলেন দুই দিনমজুর।

রামগড় ৪৩ বিজিবি সূত্র জানায়, তাদের নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে দুজন দিনমজুর আবুল কালাম ও রুহুল আমিন বিজিবির রামগড় বিওপির ঘেরা বেড়ার মেরামত কাজ করতে গেলে ইউএনও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাদের জেলে পাঠান। তবে ইউএনও খোন্দকার ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত দাবি করেন, ‘প্রতিশোধ হিসেবে শ্রমিকদের জেলে পাঠানো হয়নি। একজন বিচারক হিসেবে দুই বছরের জেল দেওয়ার বিধান রয়েছে। আমি দিয়েছি পাঁচ দিন।’

রামগড় উপজেলা প্রশাসন ও বিজিবির জমি নিয়ে বিরোধ ও শ্রমিক জেলে যাওয়ার পর ৪ আগস্ট খাগড়াছড়ি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কাজী মো. আলীমউল্যাহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, বিজিবি-উপজেলা প্রশাসন জমি নিয়ে বিরোধ ও শ্রমিকের জেলে যাওয়া দুঃখজনক।

দিনমজুর আবুল কালামের স্ত্রী অজিফা খাতুন বলেন, ‘আমাদের তিন মেয়ে, দুই ছেলেসহ সাতজনের সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে জেলে পাঠানো হয়েছে। এ কারণে আমাদের সংসার অচল হয়ে পড়েছে।’

এমএইচডি/জেডএস