রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলায় স্বামী ও সন্তানের খোঁজে এসে গণধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার পাঁচ আসামির মধ্যে তিন জন দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। অপর দুই জনের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এসময় আসামি আল-আমিন হোসেন, সবুজ ও শফিকুল ইসলাম দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শেখ সাদী আসামি শফিকুলের, ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হুদা চৌধুরী আসামি সবুজের এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলাম আসামি আল আমিনের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এছাড়াও মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামি বিল্লাল হোসেন ও রাসেল ওরফে মোল্লা রাসেলকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্তা আক্তার তাদের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আদালতে সংশ্লিষ্ট শাখার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মাহফুজুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ জানায়, গত ২৫ জানুয়ারি ভুক্তভোগী ওই নারী দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের একটি জেলা থেকে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করার জন্য মোহাম্মদপুরের বসিলায় আসেন। বসিলা এলাকার এক বাসায় ভুক্তভোগী তার স্বামী-সন্তানসহ থাকতেন। আনুমানিক চার মাস আগে শারীরিক অসুস্থতার জন্য সন্তানদের স্বামীর কাছে রেখে ভিকটিম তার গ্রামের বাড়িতে চলে যান। এর মধ্যে স্বামী তাকে ডিভোর্স দেন।

ঘটনার দিন বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ভুক্তভোগী ওই নারী তার আগের বাসায় এসে স্বামী-সন্তানকে না পেয়ে আশপাশে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। বাড়ির মালিক ও পাশের ভাড়াটিয়ারা তার স্বামী-সন্তানদের কোনো ঠিকানা দিতে পারেননি। পরে রাত ৯টা পর্যন্ত বসিলা চল্লিশটি হাউজিং, ফিউচার হাউজিং, গার্ডেন সিটি হাউজিং, স্বপ্নধরা হাউজিংয়ের আশপাশের এলাকায় খোঁজাখুঁজি করেন। পরে সন্তানদের সন্ধান না পেয়ে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

ভুক্তভোগী রাত সাড়ে ৯টার দিকে বসিলা চল্লিশ ফিট তিন রাস্তার মোড় থেকে একটি রিকশা ভাড়া করেন। কিন্তু রিকশাচালক ভুক্তভোগীকে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে না নিয়ে ঢাকা উদ্যান ও বসিলার বিভিন্ন রাস্তায় ঘোরাতে থাকেন। ওই সময় বিভিন্নজনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন রিকশাচালক। ভুক্তভোগীকে তার স্বামীর বাসা খুঁজে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সবাইকে ফোন করেন তিনি।

রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে অজ্ঞাতনামা রিকশাচালক পরিকল্পনা অনুযায়ী অন্য সহযোগীদের নিয়ে বসিলা ফিউচার টাউন রোডের শেষ মাথায় একটি অস্থায়ী শ্রমিকদের টিনের ঘরে ভিকটিমকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে নিয়ে যায়। সেখানে ওই নারীকে পাঁচ জন ধর্ষণ করে ও দুই জন পাহারা দেয়। পরে ওই নারীর চিৎকারে এলাকার নিরাপত্তা রক্ষী ও লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে আসামিরা পালিয়ে যায়। সংবাদ পেয়ে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং ভুক্তভোগী ওই নারীকে উদ্ধার করে। পরে ভিকটিমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হয় এবং প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেন।

শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর গাবতলী, ডেমরা, বসিলা ও ভোলার তজুমুদ্দিন এলাকা থেকে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়।

এনআর/এসএসএইচ/