ছবি: সংগৃহীত

সদ্য প্রয়াত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে এক ঘণ্টার সাজা দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ২০১৫ সালের ৯ জুন আদালত অবমাননার দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এজলাসে আসামির কাঠগড়ায় তাকে এক ঘণ্টা রেখে এ সাজা কার্যকর করা হয়।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল-২ জাফরুল্লাহকে এই সাজা দেন। এছাড়া তাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানাও করেন ট্রাইব্যুনাল। সাতদিনের মধ্যে জরিমানা না দিলে তাকে এক মাসের জন্য কারাগারে যেতে হবে বলে বলা হয়। একই আদেশে আদালত অবমাননার জন্য অভিযুক্ত অন্য ২২ জনকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। তবে ভবিষ্যতে বিবৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল তাদের সতর্ক থাকতে বলেন।

২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর আদালত অবমাননার দায়ে সাজাপ্রাপ্ত নিউ এজ পত্রিকার বিশেষ প্রতিবেদনের সম্পাদক ডেভিড বার্গম্যানের সাজায় উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন দেশের ৫০ জন বিশিষ্ট নাগরিক। পরে বিবৃতি থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির। ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ৪৯ জন বিবৃতি দাতার কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চান ট্রাইব্যুনাল। বিবৃতির জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ায় ২৬ বিবৃতি দাতাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন ট্রাইব্যুনাল। ২০১৫ সালের ১ এপ্রিল বাকি ২৩ জনের বিরুদ্ধে অবমাননার রুল দেন ট্রাইব্যুনাল আদালত।  

ডা. জাফরুল্লাহ প্রসঙ্গে দেওয়া আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ট্রাইব্যুনাল-১-এ তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আসে। ওই ট্রাইব্যুনালে দেওয়া তার ব্যাখ্যার ভাষাও ছিল অবমাননাকর। তারপরও ট্রাইব্যুনাল-১ তাকে সাজা না দিয়ে শুধু সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু এরপরও তিনি শোধরাননি। বরং এই ট্রাইব্যুনালে দেওয়া ব্যাখ্যায়ও তিনি অরুচিকর মন্তব্য করার সাহস দেখিয়েছেন। এটা নিছক ধৃষ্টতা ও বিচার বিভাগকে বুড়ো আঙুল দেখানোর শামিল। এজন্য জাফরুল্লাহ চৌধুরীর দৃষ্টান্তমূলক সাজা প্রাপ্য। কিন্তু বয়স বিবেচনায় তাকে এক ঘণ্টার সাজা দেওয়া হলো।

আদেশে অন্য ২২ জনের প্রসঙ্গে বলা হয়, জাফরুল্লাহ ছাড়া অন্যদের বিরুদ্ধে এর আগে কখনো আদালত অবমাননার অভিযোগ আসেনি। অবমাননাকর উপাদান থাকলেও ২২ জন বিবৃতির পর এর সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে সচেতন ছিলেন না, অবচেতনভাবে বিবৃতিতে সম্মতি দিয়েছেন এবং পরে এর জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন। তাই তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।

অব্যাহতি পাওয়া ২২ জন হলেন- আফসান চৌধুরী, আনু মুহাম্মদ, মাসুদ খান, শিরীন হক, আলী আহমেদ জিয়াউদ্দিন, রেহনুমা আহমেদ, ফরিদা আখতার, শহীদুল আলম, সি আর আবরার, জিয়াউর রহমান, হানা শামস আহমেদ, আনুশেহ আনাদিল, মুক্তশ্রী চাকমা, লুবনা মরিয়ম, বিনা ডি কস্তা, মাহমুদ রহমান, জারিনা নাহার কবির, লিসা গাজী, শবনম নাদিয়া, নাসরিন সিরাজ, টিবরা আলী ও দেলওয়ার হোসেন। পরে ডা. জাফরুল্লাহ ৫ হাজার টাকা জরিমানার বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন।

এর আগে মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ডা. জাফরুল্লাহ।

৮২ বছর বয়সী জাফরুল্লাহ চৌধুরী বহুবছর ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। সম্প্রতি তার বার্ধক্যজনিত জটিলতাগুলো খারাপের দিকে যায়। এর মধ্যে সোমবার তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জন্ম ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার কোয়েপাড়া গ্রামে। তার বাবা হুমায়ন মোর্শেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা আর মা হাছিনা বেগম চৌধুরী ছিলেন গৃহিনী। মা–বাবার ১০ সন্তানের মধ্যে জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন সবার বড়।

১৯৭১ সালে জাফরুল্লাহ চৌধুরী যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে ভারতের আগরতলায় গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে তা পরিচালনা করেন।

মুক্তিযুদ্ধের পর সেই হাসপাতালের নামেই একটি প্রতিষ্ঠান গড়তে চেয়েছিলেন। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে নাম ঠিক করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।

হাসপাতালের পাশাপাশি ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিও গড়েছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ১৯৮২ সালে দেশে প্রথমবারের মতো ঔষধ নীতি প্রণয়নেও তার ভূমিকা ছিল।

এমএইচডি/কেএ