রায় উপলক্ষে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়/ ছবি- ঢাকা পোস্ট

মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীনতাবিরোধী বিভিন্ন শক্তি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তারা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে ২০ বার তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়।

মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সমাবেশস্থলে বোমা রাখার ঘটনায় দায়ের মামলায় ১৪ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেন। রায় ঘোষণার সময় বিচারক রায়ের পর্যবেক্ষণে এ কথা বলেন।

পর্যবেক্ষণে বিচারক আরও বলেন, আদালতে মুফতি হান্নানের দেওয়া জবানবন্দি অনুযায়ী ২০০০ সালের জুলাই মাসে হুজির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতের জন্য শেখ হাসিনাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন তারা। ওই বছরই কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনার সমাবেশস্থলে ও হেলিপ্যাডের কাছে ৭৬ কেজি ও ৪০ কেজি ওজনের শক্তিশালী বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল। 

বিচারক বলেন, ২০০০ সালের ২০ জুলাই কোটালীপাড়ার পর ২০০১ সালে খুলনায় শেখ হাসিনাকে আবারও হত্যার চেষ্টা করা হয়। হত্যাচেষ্টার তৃতীয় ঘটনা ২০০১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটে ও চতুর্থ ঘটনা ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায়। হত্যাচেষ্টার আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে নৃশংস ও ন্যক্কারজনক এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব বলে আদালত মনে করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২০০০ সালের ২১ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় সমাবেশস্থলে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা রাখা হয়। এ ঘটনায় দায়ের মামলায় ১৪ আসামির সবাইকে আজ (মঙ্গলবার) মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। 

এর আগে মঙ্গলবার বেলা ১২টা ১৫ মিনিটে আসামিদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। ১২টা ২০ মিনিটে এজলাসে হাজির হন বিচারক। এরপর বিচারকের নির্দেশে মামলার রায় পড়া শুরু করেন সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের স্টেনোগ্রাফার। সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। পরে তাদের আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। এর আগে গত ১১ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য আজ এ দিন ধার্য হয়। 

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের তালিকা
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মো. আজিজুল হক ওরফে শাহনেওয়াজ, মো. লোকমান, মো. ইউসুফ ওরফে মোছহাব মোড়ল, মোছহাব হাসান ওরফে রাশু, শেখ মো. এনামুল হক, মো. মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ, মো. মাহমুদ আজহার ওরফে মামুনুর রশিদ, মো. রাশেদুজ্জামান ওরফে শিমুল, মো. তারেক, মো. ওয়াদুদ শেখ ওরফে গাজী খান, মো. আনিসুল ইসলাম ও সারোয়ার হোসেন মিয়া। আসামিদের মধ্যে মাওলানা আমিরুল ইসলাম ওরফে জেন্নাত মুন্সী ও মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান জামিনে রয়েছেন।

৭৬ কেজি ওজনের বোমা
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০০ সালের ২১ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ কলেজ মাঠে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশস্থলের পাশ থেকে ৭৬ কেজি ওজনের একটি বোমা উদ্ধার করা হয়। সেখানে পরের দিন শেখ হাসিনার সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। 

এ ঘটনায় কোটালীপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নূর হোসেন বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলাটি দায়ের করেন। এরপর ২০০১ সালের ১৫ নভেম্বর সিআইডির সাবেক এএসপি আবদুল কাহার আকন্দ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। বিচার চলাকালে বিভিন্ন সময়ে আদালত মোট ৫০ সাক্ষীর মধ্যে ৩৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।

টিএইচ/এইচকে