অ্যাকাউন্ট খোলার দিনেই ১০০ কোটি টাকা ঋণের জন্য আবেদন করা হয়। পরদিনই সেই ঋণ মঞ্জুর হয়ে যায়। ১০ দিনের মধ্যে জামানত ছাড়াই ঋণের টাকা বিতরণ করা হয়। সেই ঋণের এক টাকাও পরিশোধ করা হয়নি। তারপরও একই প্রতিষ্ঠানকে দুই মাসের মধ্যে পুনরায় ১৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে দুই দফা ঋণের একটি টাকাও পরিশোধ করেননি প্রতিষ্ঠানটি। 

বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের এমন অস্বাভাবিক ঋণ প্রদানের বিষয়টি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালত। আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান বেআইনিভাবে ঋণ প্রদানের বিষয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও এক্সিকিউটিভ কমিটির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আদেশের কপি দুদক চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

খেলাপি ঋণের সুদসহ ১৭৫ কোটি টাকা আদায়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের করা একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (১৮ মে) এ আদেশ দেওয়া হয়। একই আদেশে ব্যাংকের ঋণের ১৭৫ কোটি টাকা আদায়ে বাদীপক্ষকে ডিক্রি দেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম এবং একই আদালতের স্টেনোগ্রাফার লক্ষন কান্তি দাশ।

আদালত সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর গ্র‍্যান্ড ট্রেডিং এন্টারপ্রাইজ নামে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের একটি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখায় একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। একই দিন প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. মোয়াজ্জেম হোসাইন ব্যাংক থেকে ১০০ কোটি টাকা ঋণের জন্য আবেদন করেন। পরদিনই কোনো ধরনের ব্যবসায়িক সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া ওভারড্রাফট খাতে ১২ শতাংশ সুদে ১ বছরের জন্য ১০০ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর হয়ে যায়। এরপর জামানতবিহীন এই ঋণের এক টাকাও প্রদান করেননি গ্রহীতারা। 

আদালতের আদেশে উল্লেখ করা হয়, সার্বিক বিবেচনায় প্রমাণিত হয় ঋণ গ্রহীতারা ব্যবসায়ের নামে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে নাগরিকদের আমানতের বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছে। কোনো রকম ব্যবসায়িক সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া অস্বাভাবিক তড়িঘড়ি করে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ কমিটির ৫৫০তম সভায় এই বিপুল পরিমাণ ঋণ প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এক্সিকিউটিভ কমিটির অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে খাতুনগঞ্জ শাখা একই দিনে বিবাদীগণ বরাবরে মঞ্জুরিপত্র প্রদান করেছে।

একদিনের মধ্যেই অস্বাভাবিক ঋণ মঞ্জুর হওয়ায় প্রমাণিত হয় যে, ব্যাংকের তৎকালীন এক্সিকিউটিভ কমিটি এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ট্রাস্টি অব পাবলিক মানি হিসেবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যাংকের ১১৫ কোটি টাকা আত্মসাতে ব্যাংকের তৎকালীন দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ভূমিকা দুদক কর্তৃক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন হবে বলে মনে করি। নালিশি ঋণ মঞ্জুর এবং বিতরণের ঘটনা বিষয়ে অনুসন্ধানপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদেশের কপি দুদকের চেয়ারম্যান বরাবরে পাঠানো হোক।

এছাড়া মামলার রায়ে আদালত উল্লেখ করেন, বিবাদী পক্ষের ঋণ আবেদনপত্র, বাদী ব্যাংকের ঋণ মঞ্জুরিপত্র, চার্জ ডকুমেন্ট ও হিসাব বিবরণীসহ বিভিন্ন নথি পর্যালোচনা করা হয়েছে। সার্বিক পর্যালোচনায় বাদীপক্ষ মামলা প্রমাণে সক্ষম হয়েছে ও বাদীপক্ষ ১৭৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা আদায়ে ডিক্রি পেয়েছে।

এমআর/কেএ