বনানীর রেইনট্রি হোটেল

২০১৭ সালের ২৮ মার্চ রাজধানীর রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ধর্ষণের শিকার হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই শিক্ষার্থী। অনুষ্ঠানটির আয়োজনে ছিলেন আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ। ওই ঘটনায় সাফাত আহমেদসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়। কিন্তু চার বছর পার হলেও মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। এ সুযোগে একে একে জামিনে মুক্তি পান সব আসামি। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মামলাটির বিচার কার্যক্রম শিগগিরই শেষ হবে।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আফরোজা ফারহানা আহমেদ (অরেঞ্জ) বলেন, ‘বর্তমানে মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে আছে। সর্বশেষ গত ১৪ মার্চ মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক আব্দুল মতিন সাক্ষ্য দেন। তার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ৪ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন আদালত। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আত্মপক্ষ সমর্থন, যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করবেন আদালত।’

‘আগামী ২/৩ মাসের মধ্যেই মামলাটির বিচার কার্যক্রম শেষ হবে। সব আসামির সর্বোচ্চ সাজা হবে’— আশা প্রকাশ করেন আফরোজা ফারহানা আহমেদ।

এদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য নয়। ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। মেডিকেল রিপোর্টেও তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। আমরা আশা করি রায়ে আসামিরা খালাস ও ন্যায়বিচার পাবেন।’

আসামি সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিফ, সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন

বর্তমানে মামলাটি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল- ৭ এর বিচারক মোছা. কামরুন্নাহারের আদালতে বিচারাধীন।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত অভিযুক্তরা মামলার বাদী, তার বান্ধবী ও বন্ধুকে আটকে রাখে। পরে অস্ত্রের মুখে বাদী ও তার বান্ধবীকে জোর করে একটি কক্ষে নিয়ে সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ একাধিকবার ধর্ষণ করে।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, সাদমান সাকিফকে দুই বছর ধরে চেনেন মামলার বাদী। তার মাধ্যমেই ঘটনার ১০ থেকে ১৫ দিন আগে সাফাতের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। ওই দুই ছাত্রী সাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যান। সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী তাদের বনানীর ২৭ নম্বর রোডের রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে যান। হোটেলে যাওয়ার আগে বাদী ও তার বান্ধবী জানতেন না যে সেখানে পার্টি হবে। তাদের বলা হয়েছিল, এটা একটা বড় অনুষ্ঠান, অনেক লোকজন থাকবেন। অনুষ্ঠান হবে হোটেলের ছাদে। সেখানে যাওয়ার পর তারা কাউকে দেখেননি। তবে, আরও দুই তরুণী ছিলেন। পরে তাদের ছাদ থেকে নিচে নামিয়ে দেওয়া হয়। পরিবেশ ভালো না লাগায় তারা চলে যেতে চান। কিন্তু অভিযুক্তরা তাদের গাড়ির চাবি শাহরিয়ারের কাছ থেকে নিয়ে নেয় এবং তাকে মারধর করে। ধর্ষণের সময় সাফাত গাড়িচালককে ভিডিওচিত্র ধারণ করতে বলে।

ওই ঘটনায় ২০১৭ সালের ৬ মে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়। ওই বছরের ৭ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পরিদর্শক ইসমত আরা এমি আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

আসামিরা হলেন— সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিফ, সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন। বর্তমানে সবাই জামিনে আছেন।

২০১৭ সালের ১৩ জুলাই আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। মামলাটিতে এখন পর্যন্ত ৪৭ সাক্ষীর মধ্যে ২১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে হয়েছে। আগামী ৪ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইসমত আরা এমির সাক্ষগ্রহণ হবে। এরপর আত্মপক্ষ সমর্থন, যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করবেন আদালত।

টিএইচ/এমএআর