আদালত প্রাঙ্গণে পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ও তার মেয়ে ওয়াফা ইসলাম

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলায় অর্থ ও মানব পাচারের দায়ে কুয়েতের কারাগারে আটক লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সহিদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ও তার মেয়ে ওয়াফা ইসলামকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জামিন দিয়েছেন আদালত। এর আগে রোববার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন তারা। 

এসময় দুদকের পক্ষে আইনজীবী আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল ও মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর জামিনের বিরোধীতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন।

দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল এসব তথ্য নিশ্চত করেছেন।

এদিন সকালে ওই মামলায় পাপুলসহ চার জনের ৬১৭টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ ও ৯২ তফসিলভুক্ত স্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন। দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, এদিন দুদকের পক্ষ থেকে তাদের এসব ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ ও তফসিলভুক্ত স্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক এ আদেশ দেন।

এর আগে, গত ১১ নভেম্বর দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ সংস্থাটির উপপরিচালক সালাহউদ্দিন পাপুলসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার অপর আসামিরা হলেন- পাপুলের শ্যালিকা জেসমিন প্রধান ও মেয়ে ওয়াফা ইসলাম।

দুদকের মামলায়  ৬১৭ ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের মধ্যে, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের ১৪৮টি, স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলামর ৩৪৫টি, মেয়ে ওয়াফা ইসলামের ৭৬টি ও শ্যালিকা জেসমিন প্রধানের ৪৮টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মামলার অভিযোগ বলা হয়, আসামিদের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ ও ১৪৮ কোটি টাকার লন্ডারিংয়ের অভিযোগ ও প্রতিষ্ঠানের আড়ালে জেসমিন প্রধানের পাঁচটি হিসাবের মাধ্যমে ২০১২ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত লন্ডারিং হয় ১৪৮ কোটি টাকা। অথচ মাত্র বয়স ২৩ বছর বয়সী জেসমিনের নিজের কোনো আয়ের উৎস নেই।

এছাড়াও এফডিআর হিসাবের ২ কোটি ৩১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৮ টাকার কোনো উৎস শ্যালিকা জেসমিন দাখিল করতে পারেননি। যে কারণে অবৈধ সম্পদের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়।

সিআইডির মামলায় আরও ৫৩ ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ
পল্টন থানায় সিআইডির দায়ের করা মানি লন্ডারিং মামলায় পাপুলসহ আটজনের বিরুদ্ধে ৫৩টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রোববার (২৭ ডিসেম্বর) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) ঢাকা ম্যাট্রেপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরীর আদালতে মামলার এজাহার পৌঁছালে বিচারক তা গ্রহণ করে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন আগামী ৩১ জানুয়ারি দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- পাপুলের শ্যালিকা জেসমিন প্রধান, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম, ভাই কাজী বদরুল আলম লিটন, পাপুলের ব্যক্তিগত কর্মচারী মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান মনির, জব ব্যাংক ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজার গোলাম মোস্তফা, জেসমিন প্রধানের মালিকানাধীন কম্পানি জেডব্লিউ লীলাবালী ও কাজী বদরুল আলম লিটন। এছাড়া এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আরও পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর পল্টন থানায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী পুলিশ সুপার (অর্গানাইজ ক্রাইম) আলামিন বাদী হয়ে কাজী শহিদুল ইসলাম পাপুল, তার শ্যালিকা ও মেয়েসহ আটজনের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে মামলাটি দায়ের করেন।  

আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আসামিরা মানবপাচারকারী চক্র। তারা বিভিন্ন সময় ৩৮ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার ৫৬৭ টাকা অবৈধভাবে আয় করেছেন। যার সঙ্গে পাপুল ও তার মেয়ের প্রতিষ্ঠান জড়িত বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন।

টিএইচ/এসএম