টানা ১০ ঘণ্টা সাক্ষ্য নিয়েছেন ঢাকার একটি ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। আদালতের নির্ধারিত সময় পার হলেও সাক্ষ্যগ্রহণ চালু রাখায় বিচারকের সমালোচনা করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। তাদের অভিযোগ, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবান্বিত হয়ে এমনটি করেছেন আদালত।

গতকাল বুধবার (২৬ জুলাই) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাসিবুল হকের আদালতে এমন ঘটনা ঘটে।

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, ২০১৩ সালে হরতাল-অবরোধ চলাকালীন রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল আজ (বুধবার)। আদালত সকাল ১১টা থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন। এটি শেষ হয় রাত ৯টায়। অথচ, আদালতের নির্ধারিত সময় ছিল সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। 

নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর আদালতকে সাক্ষ্যগ্রহণ থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু কর্ণপাত করেননি বিচারক। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবান্বিত হয়ে আদালত টানা ১০ ঘণ্টা সাক্ষ্যগ্রহণ করেন বলে অভিযোগ আইনজীবীদের।

এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক ঢাকা পোস্টকে জানান, সকাল ১১টা থেকে আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এদিন আদালতে ১১ সাক্ষীকে হাজির করা হয়। এর মধ্যে পাঁচজনের জেরা শেষ করতেই বিকেল গড়িয়ে রাত নেমে আসে। রাত ৮টা ৫০ মিনিটে তা শেষ হয়। এটি বিরল ঘটনা, এর আগে কেউ দেখেননি।

‘আসামিরা দেশের বৃহৎ দুই রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। দেশে চলমান এই রাজনৈতিক পরিস্থিতির (পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি) মধ্যে হঠাৎ আদালতের এমন আচরণ অবশ্যই রাজনৈতিকভাবে প্রভাবান্বিত বলে মনে হচ্ছে।’

১০ ঘণ্টা ধরে চলা এমন সাক্ষ্যগ্রহণের আইনগত কোনো ভিত্তি আছে কি না— জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আদালতের কার্যক্রম বিধিবদ্ধ আইন দ্বারা নির্ধারিত। এর বাইরে যাওয়ার কোনো অধিকার কারও নেই। আদালতের এমন সাক্ষ্যগ্রহণের (১০ ঘণ্টা ধরে চলা সাক্ষ্যগ্রহণ) আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। যে বা যারা এটা করছেন তারা আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন।’

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় তৎকালীন ১৮ দলীয় জোটের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ চলাকালীন আজমপুর রেলগেট কাঁচাবাজারের সামনে দায়িত্বরত পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ৩০০/৪০০ বিক্ষোভকারী একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করে।

ওই ঘটনায় এজাহারনামীয় ৭৩ জনসহ অজ্ঞাত ৩০০/৪০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে পুলিশ। উত্তরা পূর্ব থানার উপপরিদর্শক এস্কান্দার আলী শেখ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। 

২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় তৎকালীন ১৮ দলীয় জোটের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ চলাকালীন আজমপুর রেলগেট কাঁচাবাজারের সামনে দায়িত্বরত পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ৩০০/৪০০ বিক্ষোভকারী একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করে। ওই ঘটনায় এজাহারনামীয় ৭৩ জনসহ অজ্ঞাত ৩০০/৪০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে পুলিশ

মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- তৎকালীন ঢাকা মহানগর যুবদল উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাহাঙ্গীর, উত্তরা পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি এম কফিল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক সালাম সরকার, দক্ষিণ থানা বিএনপির সভাপতি সাহাবুদ্দিন সাগর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সাবেক সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ, জামায়াতে ইসলামীর গাজীপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহিন, শিবিরের উত্তরা থানার সভাপতি হেলাল সরকার।

২০২২ সালের ২৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এ মামলার বিচার কার্যক্রম শুরুর আদেশ দেন আদালত।

এনআর/এমএআর/