চট্টগ্রামের মিতু হত্যা মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন শেখ মো. মোস্তাইন নামে একজন। বৃহস্পতিবার (১০) আগস্ট) চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে তিনি সাক্ষ্য দেন।

মোস্তাইন নড়াইলের লোহাগাড়া থানা এলাকার বাসিন্দা। তিনি ওই এলাকায় বিকাশের দোকান পরিচালনা করেন। মিতু হত্যার পর সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের পাঠানো ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করে তিনি মামলার অন্যতম আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার মুছার কাছে পাঠান। মুছা বাবুল আক্তারের সোর্স ছিলেন। মিতু হত্যাকাণ্ডের পর তার আর হদিস পাওয়া যায়নি। পলাতক আসামি হিসেবে তার বিরুদ্ধে আদালতে বিচার চলমান রয়েছে।

এদিকে আজ (বৃহস্পতিবার) মোস্তাইন সাক্ষ্য দেওয়ার সময় বাবুল আক্তারের প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন অনুপস্থিত ছিলেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, মঙ্গলবার থেকে থেকে টানা তিনদিন সাক্ষ্য চলমান রয়েছে। গত দুইদিনে দুজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। গতকাল (বুধবার) আমরা আদালতকে লিখিতভাবে জানিয়েছি আজকে যাতে সাক্ষ্য না নেওয়া হয়। কারণ আমার অন্য মামলা ছিল। আদালত গতকাল মৌখিকভাবে মঞ্জুর করেছিলেন। কিন্তু আজকে (বৃহস্পতিবার) গতকালের সাক্ষীর জেরা শেষে নতুন করে আরেকজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। আমরা ওইসময় আদালতে ছিলাম না।

আরও পাড়ুন : মুছার জন্য বাবুলের পাঠানো ১ লাখ টাকা গ্রহণ করেন মামুন

মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আবদুর রশীদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিন দিনে তিনজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। আজকে মোস্তাইনের সাক্ষ্যগ্রহণের সময় প্রধান আসামি বাবুল আক্তারের আইনজীবী ছিলেন না। তারা টাইম পিটিশন দিয়েছিলেন। কিন্তু আদালত মঞ্জুর না করে সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন। তবে বাবুল আক্তার ছাড়া অন্যান্য আসামির আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। তারা সাক্ষীকে জেরাও করেছেন। বাবুল আক্তারের আইনজীবীরা সাক্ষী মোস্তাইনকে জেরা করতে চাইলে পরের ধার্য তারিখে আবেদন করতে পারবেন। আদালত মঞ্জুর করলে সাক্ষীকে রিকল করা হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে তৎকালীন পুলিশ সুপার ও মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। 

তবে মামলাটিতে স্ত্রী হত্যাকাণ্ডে স্বামী বাবুল আক্তারেরই সম্পৃক্ততা পায় পিবিআই। ২০২১ সালের ১২ মে আগের মামলাটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। একই দিন বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন। ওইদিনই মামলাটিতে বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে পিবিআই। সেই থেকে কারাগারে রয়েছেন বাবুল।

এদিকে, প্রথম মামলায় পিবিআইয়ের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর নারাজির আবেদন করেন বাবুলের আইনজীবী। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ৩ নভেম্বর নারাজি ও পিবিআইয়ের প্রতিবেদন খারিজ করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন। এরপর দুটি মামলাই তদন্ত করতে থাকে পিবিআই। তবে পরবর্তী সময়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গত বছরের ২৫ জানুয়ারি মিতুর বাবার দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এরপর একই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রথম মামলাটি অধিকতর তদন্ত শেষে বাবুলসহ ৭ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।

গত ১৩ মার্চ আলোচিত মামলাটিতে বাবুল আক্তারসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

এমআর/এসকেডি