বিভিন্ন জেলায় দায়ের করা পৃথক ২০ হেরোইন মামলার ২০ আসামিকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত।

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম সব জামিন আদেশ স্থগিত করে আদেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

জানা গেছে, গাজীপুরের কালীগঞ্জের পানজোড়া গ্রামের আমজাদ হোসেনের পুত্র শামীম আহমেদ সামিউল গত বছরের ১ জুলাই ৩০০ গ্রাম হেরোইনসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। পরদিন তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে পুলিশ। গত ১৭ জুলাই গাজীপুরের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত আসামির জামিন নামঞ্জুর করেন। এই জামিন নামঞ্জুরের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করে জামিন চান ওই আসামি। গত ১৭ সেপ্টেম্বর আসামিকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আসামিকে কেন স্থায়ী জামিন দেওয়া হবে না এই মর্মে রুল জারি করে। বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর দ অবকাশকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ জামিন দেন।

একই বেঞ্চ ১২৭ গ্রাম হেরোইনের মামলায় জামিন দেন মাদক ব্যবসায়ী মো. শরিফ উদ্দিনকে। তাকে গত ৬ এপ্রিল হেরোইনসহ গ্রেপ্তার করে রাজধানীর শাহজাহানপুর থানা পুলিশ। ওই মামলায় গত ১২ জুলাই আসামি শরিফকে জামিন দেয়নি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত। এরপর তিনি জামিন চান হাইকোর্টে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ আসামিকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের পাশাপাশি রুল জারি করেন। রুলে তাকে কেন স্থায়ী জামিন দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।

এভাবে হেরোইনের ২০ মামলার ২০ আসামিকে জামিন দেন হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ। জামিন পাওয়া এসব মাদক মামলায় হেরোইনের সর্বোচ্চ পরিমাণ ছিল ৭৭৫ গ্রাম। এছাড়া অন্যান্য মামলায় হেরোইনের পরিমাণ ছিল ৬৮০ গ্রাম, ৫১৫ গ্রাম, ৫১২ গ্রাম, ৩০০ গ্রাম, ২৫০ গ্রাম, ২০৮ গ্রাম, ২০৫ গ্রাম, ১০৫ গ্রাম, ১০০ গ্রাম, ৫৫ গ্রাম, ৫০ গ্রাম ও সর্বনিম্ন ২৭ গ্রাম। একপর্যায়ে একই বেঞ্চ থেকে হেরোইনের মামলার জামিন পাওয়ার বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেলকে অবহিত করা হয়। এরপরই সংশ্লিষ্ট আইন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয় জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে। তারই অংশ হিসেবে জামিন স্থগিত চেয়ে দ্রুত চেম্বার আদালতে আবেদন করা হয়। 

স্থগিত আবেদনে বলা হয়, হেরোইনের মতো মাদক যুব সমাজকে ধ্বংস করছে। বিনষ্ট করছে সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা। আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। দেওয়া হয়েছে চার্জশিটও। অনেক মামলার বিচার চলছে আদালতে। এসব বিষয় বিবেচনায় না নিয়ে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছে। আসামিরা জামিন পাওয়ায় ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে বাধার সৃষ্টি করবে। শুনানি শেষে ২০ মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আট সপ্তাহের জন্য স্থগিতের আদেশ দেন চেম্বার বিচারপতি।

এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ থেকে ২০ হেরোইনের মামলায় জামিন হয়েছিল। এসব মামলায় বিভিন্ন পরিমাণের হেরোইন জব্দ করা হয়েছে। রাসায়নিক পরীক্ষায় হেরোইন প্রমাণিত হয়েছে। 

তিনি বলেন, সাধারণত স্বাভাবিক সময়ে উচ্চ আদালত থেকে এ ধরনের ভয়ংকর মাদকের মামলায় এত জামিন পাওয়ার নজির দেখা যায় না। আমরা হাইকোর্টের জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছিলাম। আমাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে চেম্বার আদালত জামিন স্থগিতের আদেশ দিয়েছেন।

এমএইচডি/জেডএস