জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৪ আসনের ফল স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এ আসনের ১৮টি কেন্দ্রে ভোটে অনিয়মের অভিযোগ ১০ দিনের মধ্যে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী আওলাদ হোসেনকে বিজয়ী ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ থেকে বিরত থাকতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট সানজিদা খানমের রিটের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। 

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোতাহার হোসেন সাজু,আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। 

এর আগে ১৮টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণে অনিয়মের অভিযোগে ফলাফল বাতিল চেয়ে আজ সকালে হাইকোর্টে রিট করেন ওই আসনের নিকটতম প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম।

সূত্রাপুর (ডিএসসিসি ওয়ার্ড ৪৭), ডেমরা (ডিএসসিসি ওয়ার্ড ৫১, ৫২, ৫৩, ৫৪, ৫৮, ৫৯) উপজেলা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৪ আসন। 

এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সানজিদা খানমকে পরাজিত করে বিজয়ী হন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওলাদ হোসেন। আওলাদ হোসেন মোট ভোট পান ২৪ হাজার ৭৭৫টি। সানজিদা খানম নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট পান ২২ হাজার ৫৭৭টি। এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা লাঙল প্রতীক নিয়ে পান ৭ হাজার ৭৯৮ ভোট। 

রোববার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া সারা দেশে নির্বাচন মোটামুটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়। নির্বাচন হয় ২৯৯ আসনে। ২৮টি রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলে প্রার্থী ছিলেন ১৯৭১ জন। ভোট নেওয়া হয় ব্যালট পেপারে। 

২৯৯টি আসনের মধ্যে ২২২টি আসন পেয়েছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১টি আসন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন ৬২টি আসন, এছাড়া অন্যান্য দল থেকে পেয়েছেন ৩টি আসন। 

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৮টি দল নির্বাচনে অংশ নেয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছিল। 

তবে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়ের পর ভারত, চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভূটান, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, নেপাল, মরক্কো, ব্রাজিলের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানানো হয়। শেখ হাসিনাকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। 

অবশ্য ভিন্ন পথে হেঁটেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে মনে করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ ছিল না বলেও ভাষ্য ওয়াশিংটনের। আর নির্বাচনে সব দল অংশ না নেওয়ায় মানুষের ভোট দেওয়ার যথেষ্ট বিকল্প ছিল না বলে অভিমত যুক্তরাজ্যের। দেশটি বলছে, গণতান্ত্রিক নির্বাচন নির্ভর করে গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও সুষ্ঠু প্রতিদ্বন্দ্বিতার ওপর। মানবাধিকার, আইনের শাসন ও যথাযথ প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অপরিহার্য উপাদান। নির্বাচনের সময় এসব মানদণ্ড যথাযথভাবে মানা হয়নি। এছাড়া নির্বাচনে সব দল অংশ নেয়নি বলে বাংলাদেশের মানুষের ভোট দেওয়ার যথেষ্ট বিকল্প ব্যবস্থা ছিল না বলে দাবি করেছে যুক্তরাজ্য।

এমএইচডি/এনএফ