চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের একজন ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপির ৫০ কোটি টাকার সুদ মওকুফের ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থঋণ আদালত। এ বিষয়ে প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টরের (এমডি) কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। একই সঙ্গে সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো সার্কুলারের ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে কি-না এবং নালিশি ঋণের টাকা পাচার হয়েছে কি-না তা দুইজন যুগ্ম-পরিচালকের সমন্বয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য চট্টগ্রামের নির্বাহী পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রোববার (৩ মার্চ) চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান আদেশ দিয়েছেন। রায়ের বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ৭৩ কোটি ৬৮ লাখ ২২ হাজার ৮১৮ টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের দাবিতে প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড খাতুনগঞ্জ শাখা ২০১৬ সালের ১৬ মার্চ মামলাটি দায়ের করে। আসামি হাজী মোহাম্মদ আবুল বশরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক ২০১৪ সালের ২ মার্চ সিসি (হাইপো) খাতে ৮ কোটি টাকা এবং টাইম লোন খাতে ৫০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করেন।

আসামি বশরের লিখিত বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, তিনি ঋণ সুবিধা উপভোগ করেন। বার্ষিক ১৬ শতাংশ হার সুদে চিনি ও গমসহ ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ের জন্য ২০১৪ সালের ৮ নভেম্বর ঋণ সুবিধা মঞ্জুর করা হয়েছিল। প্রতিটি টাইম লোনের মেয়াদ ছিল ৯০ দিন। আসামি মঞ্জুরিপত্রের শর্ত মেনে ঋণ সুবিধা উপভোগ করলেও কোনো টাকা ফেরত দেননি। তাই বাদী মামলাটি দায়ের করে।

আজ (রোববার) ধার্য তারিখে মামলাটির আদেশে বিচারক উল্লেখ করেছেন, ব্যাংকের সঙ্গে আসামির দাখিল করা আপসনামা তথা সোলেনামা পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাদী ব্যাংক ৪৯ কোটি ১৪ লাখ ৬৯ হাজার ৬১২ টাকা সুদ মওকুফ করে দিয়ে ৫৮ কোটি টাকা আদায়যোগ্য দায় নির্ধারণ করেন। ১৬ শতাংশ হারে সুদ আদায়ের শর্ত থাকলেও সম্পূর্ণ বিনা সুদে মূল টাকা ২০২৪ থেকে ২০৩৩ সালের মধ্যে ১৯টি ছয় মাসিক কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

২০১৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ সালের ২৫ জুন এবং ২০২২ সালের ১৬ মে তারিখে মঞ্জুরিপত্র দ্বারা সুদ মওকুফ করা সত্ত্বেও আসামি সেটি মোতাবেক ঋণের টাকা ফেরত দেননি। ৫৮ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের পর ৫ বছর পর্যন্ত কোনো টাকা পরিশোধ না করায় প্রতীয়মান হয় যে, আসামি হাজী বশর একজন ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি। তাকে ঢালাও ভাবে সুদ মওকুফ সুবিধা প্রদান করা ন্যায়সঙ্গত হয়নি। 

বিপুল পরিমাণ সুদ মওকুফ করা হলেও এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এটির মাধ্যমে প্রাইম ব্যাংকের বোর্ড অব ডিরেক্টরস শেয়ার হোল্ডারদের স্বার্থ পরিপন্থি কাজ করেছেন। ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিরা মূল ঋণ আদায়ের পূর্বে সুদ মওকুফ সুবিধা পাওয়ার কারণে যথাসময়ে ব্যাংক ঋণ পরিশোধে চরমভাবে উদাসীনতা দেখাচ্ছেন। এমতাবস্থায় আগামী ১৮ মার্চ তারিখে বিবাদী হাজী বশরের সুদ মওকুফের ন্যায্যতা বিষয়ে ব্যাখ্যা দাখিল করার জন্য প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে নির্দেশ দেওয়া গেল।

এমআর/কেএ