সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের নির্বাচনে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে হট্টগোল, হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

রোববার (১০ মার্চ) তাকে আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নুরুল হুদা চৌধুরীর আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আদালতে শাহবাগ থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক নিজাম উদ্দিন ফকির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে শনিবার (৯ মার্চ) সন্ধ্যায় রাজধানীর পল্টনে অবস্থিত তার নিজ চেম্বার থেকে সিআইডি ব্যারিস্টার কাজলকে আটক করে। এরপর তাকে শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

শুক্রবার (৮ মার্চ) রাতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের দুই দিনব্যাপী নির্বাচনে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে হট্টগোল, হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করা হয়। সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুর রহমান চৌধুরী সাইফ বাদী হয়ে তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে এ মামলা দায়ের করেন।

মামলায় স্বতন্ত্র থেকে সম্পাদক প্রার্থী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি, বিএনপির প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ ২০ জনকে আসামি করা হয়। অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী।

মামলায় অন্য আসামিরা হলেন— অ্যাডভোকেট মো. জাকির হোসেন ওরফে মাসুদ (৫৫), অ্যাডভোকেট শাকিলা রৌশন, অ্যাডভোকেট কাজী বশির আহম্মেদ , ব্যারিস্টার উসমান, অ্যাড. আরিফ, অ্যাডভোকেট সুমন, অ্যাডভোকেট তুষার, রবিউল, ব্যারিস্টার চৌধুরী মৌসুমী ফাতেমা (কবিতা), সাইদুর রহমান জুয়েল (৪০), অলিউর, যুবলীগ নেতা জয়দেব নন্দী, মাইন উদ্দিন রানা, মশিউর রহমান সুমন, কামাল হোসেন, আসলাম রাইয়ান, অ্যাডভোকেট তরিকুল ও অ্যাডভোকেট সোহাগ। এ ছাড়া মামলায় ৩০/৪০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘আসামিরা ১নং আসামির নির্দেশের এবং প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতির নিচ তলার শহিদ শফিউর রহমান মিলনায়তন রুমের দরজা ৩নং আসামি ১, ২, ও ৪ নং আসামির পরামর্শক্রমে সু-কৌশলে ও ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে অডিটোরিয়ামের দরজা খুলে দিলে অস্ত্র হাতে জোরপূর্বক বেআইনি জনতাবদ্ধে অনধিকার প্রবেশ করে অকথ্য ভাষায় আমাকেসহ নির্বাচন সাব-কমিটির অন্যান্য সদস্যদের গালিগালাজ করে। ৫ ও নং আসামিদ্বয়ের হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথার মাঝ বরাবর আঘাত করলে আমি বাধা দিতে গেলে আমার বাম পাশের কানের উপরে মাথার অংশে সজোরে আঘাত করলে আমি মারাত্মকভাবে জখমপ্রাপ্ত হই। অন্যান্য আসামিরা কাঠের লাঠি, কাঠের ও প্লাস্টিকের চেয়ার দিয়ে অতর্কিতভাবে এলোপাতাড়ি মারপিট করে ও পা দিয়ে আঘাত করে আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে এবং আমার পরিহিত কাপড় ছিড়ে ফেলে। উক্ত আসামিরা আমার সঙ্গীয় ব্যারিস্টার জাকারিয়া হাবিবকে মারপিট করে আহত করে। একপর্যায়ে ৫নং আসামির হাতে থাকা কাঠের লাঠি দিয়ে ব্যারিস্টার জাকারিয়া হাবিবকে আঘাত করে তাহার ডান হাতের আঙুল ভেঙে ফেলে ও তাহার পরিহিত কাপড় ছিড়ে ফেলে এবং তাহার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। ১নং আসামি এড, রিনা বেগমকে চড়-থাপ্পড় ও হুমকি দেয় এবং ১১নং আসামি গলায় চেপে শ্বাস রোধ করে হত্যা করার চেষ্টা করে। অন্যান্য অজ্ঞাতনামা আসামিরা অডিটোরিয়ামের ভিতরে এলোপাতাড়ি ভাঙচুর ও অরাজকতা সৃষ্টি করে। যাহার ফলে নির্বাচনী দায়িত্বরত সদস্যদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়ে নির্বাচনী অন্যান্য কার্যক্রম সম্পূর্ণ রূপে ভন্ডুল হয়ে যায়। একপর্যায়ে সকল আসামিসহ ১নং আসামি নিজে অস্ত্রের মুখে নির্বাচন সাব-কমিটির প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. আবুল খায়েরকে ভোট গণনা ছাড়াই সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করার জন্য বাধ্য করে। নির্বাচন সাব-কমিটির সকল সদস্য জীবন বাঁচানোর উদ্দেশ্যে ভোট গণনার কাজ না করেই চলে যেতে বাধ্য হয়। আমার পরিহিত প্যান্টের ডান পকেটে থাকা ১৫ হাজার টাকা ১২ নং আসামি নিয়ে যায়। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সিসি টিভি ফুটেজে ঘটনার বিষয়ে সমস্ত ধারণ করা আছে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও উক্ত ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ভোট গণনা এবং ফলাফল ঘোষণার কাজ আসামিরা সম্পন্ন হতে না দিয়ে ১নং আসামিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক হিসাবে নির্বাচিত ঘোষণা করার অবৈধ দাবিতে তাহার নেতৃত্বে উপরোক্ত ঘটনা ঘটায়।’

এনআর/এসএসএইচ