ময়মনসিংহ-১১ আসনে এম এ ওয়াহেদের এমপি পদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এর ফলে এমপি হিসেবে তার দায়িত্ব পালনে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তানজীবুল আলম। এমপি ওয়াহেদের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক।

এর আগে গত ১০ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনের ফল ঘোষণা করে জারি করা গেজেট স্থগিত করতে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ময়মনসিংহ-১১ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদের পাপুয়া নিউগিনির নাগরিকত্বের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (ইসি) বরাবরে করা আবেদন চার সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

ময়মনসিংহ-১১ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের এক সম্পূরক আবেদনের শুনানি শেষে বুধবার (১০ জানুয়ারি) বিচারপতি মো. ইকবাল কবির ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন‌।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজীব-উল আলম ও ব্যারিস্টার রাগিব কবির। 

নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মুহাম্মদ আনিছুজ্জামান। আর আব্দুল ওয়াহেদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।

আদেশের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তানজীব-উল আলম বলেন, ময়মনসিংহ-১১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ পাপুয়া নিউগিনির নাগরিক। তিনি ওই দেশের নাগরিক থাকায় আইন অনুযায়ী তার পক্ষে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ নেই। এ কারণে নির্বাচনে তার প্রার্থী হওয়া এবং তাকে বিজয়ী করে জারি করা গেজেট চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেন ওই আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ।

শুনানি শেষে বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব থাকা সত্ত্বেও আব্দুল ওয়াহেদের প্রার্থী হওয়াকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। একইসঙ্গে আব্দুল ওয়াহেদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এবং তাকে বিজয়ী ঘোষণা করে জারি করা গেজেট কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে, রুলে তাও জানতে চেয়েছেন আদালত। চার সপ্তাহের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

পাশাপাশি এ বিষয়ে সিইসি বরাবরে নৌকার প্রার্থীর করা আবেদন চার সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এর আগে আব্দুল ওয়াহেদের বিরুদ্ধে দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ এনে গত ২৩ ডিসেম্বর সিইসি বরাবরে নৌকার প্রার্থী কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ গত ২০ ডিসেম্বর প্রিন্ট মিডিয়া, টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি এবং চ্যানেল আই মারফত প্রচারিত সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, উক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীর (আব্দুল ওয়াহেদ) পাপুয়া নিউগিনি এবং বাংলাদেশের পাসপোর্ট রয়েছে। তিনি দুটি পাসপোর্ট ব্যবহার করেন। 

উল্লেখ্য, তিনি গত ১৯ অক্টোবর পাপুয়া নিউগিনির পাসপোর্ট ব্যবহার করে পোর্টমোসরি থেকে ঢাকায় অবতরণ করেন। নির্বাচনী শর্ত অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তির দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকে, তাহলে ওই ব্যক্তি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। যদি ওই ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে চায়, তাহলে বহির্বিশ্বের নাগরিকত্ব বাতিল করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। উল্লিখিত ব্যক্তি একাধিক দেশের নাগরিক বিধায় তাহার তদন্ত সাপেক্ষে যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে কোনো সাড়া না পেয়ে গত ২৮ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ।

ওই রিট বিচারাধীন থাকায় অবস্থায় গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ ট্রাক প্রতীকে ৯৫ হাজার ২৮০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। আর আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ৫৬ হাজার ৪২১ ভোট পেয়ে পরাজিত হন। ৯ জানুয়ারি মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদকে নির্বাচিত ঘোষণা করে গেজেট জারি করে নির্বাচন কমিশন। 

এরপর নৌকার প্রার্থী কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ হাইকোর্টে একটি সম্পূরক আবেদন করেন। 

এমএইচডি/জেডএস