দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আলোচিত সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলায় দুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায়ে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় নিহতের ভাশুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী, তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহীন ও মন্টু মন্ডলকে খালাস দিয়েছেন আদালত। 

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- আনাস মাহমুদ ওরফে রেজওয়ান ও মারুফ রেজা। দণ্ডপ্রাপ্ত আনাস মাহমুদ নিহত সগিরা মোর্শেদের ভাশুর ও মামলার প্রধান আসামি ডা. হাসান আলী চৌধুরীর শ্যালক। 

বুধবার (১৩ মার্চ) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক মোহাম্মদ আলী হোসাইনের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক উল্লেখ করেন, সাক্ষ্য প্রমাণে তাদের পারিবারিক বিরোধের বিষয়টি প্রমাণিত না হওয়ায় নিহতের ভাশুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী, তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহীনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে আসামি পক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, মামলার বিচার চলাকালে সাক্ষীতে পারিবারিক বিরোধের বিষয়টি আসেনি। মামলার বাদীও সাক্ষ্যতে পারিবারিক বিরোধের বিষয়টি উল্লেখ করেননি। পিবিআইয়ের দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয় সগিরা মোর্শেদের পরিবারের সঙ্গে আসামি শাহীনের বিভেদ তৈরি হয়েছিল। এছাড়া সগিরাকে অনেক অপছন্দ করতেন এবং শিক্ষাগতযোগ্যতা নিয়ে সগিরা-শাহীনেরও মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। সম্বোধন করা নিয়েও পারিবারিক দ্বন্দ্ব ছিল। সাক্ষ্য প্রমাণে এসব কিছুই বাদীপক্ষ প্রমাণ করতে না পারায় বিচারক সন্তুষ্ট হয়ে তাদেরকে খালাস দিয়েছেন। 

অপরদিকে বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, এই মামলায় চারজন আসামি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। সেখানে দুইজনেরটা গ্রহণ করে সাজা দিয়েছেন, আর দুজনেরটা গ্রহণ না করে খালাস দিয়েছেন। আদালতকে হয় পুরো বিষয়টা গ্রহণ বা বর্জন করতে হবে। কিন্তু এখানে আংশিক গ্রহণ হরে রায় দেওয়া হয়েছে। আমার মনে হয় দুই পক্ষকে সন্তুষ্ট করতে এই গোঁজামিলের রায় দেওয়া হয়েছে।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মামলার বাদী সগিরা মোর্শেদের স্বামী আ. সালাম চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর একটা রায় হয়েছে। এ রায়ে আমরা আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেটা হয়নি। যাই হোক বিচারক প্রচণ্ড চাপের মুখেও মোটামুটি একটা রায় দিয়েছেন। এর থেকেও খারাপ রায় হতে পারতো।
 
তিনি আরও বলেন, আমি রায়ে কিছুটা স্যাটিসফায়েড। এখন আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবো।

এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি একই আদালত রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে এ মামলায় রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন। রায় প্রস্তুত না হওয়ায় আদালত দুই দফায় রায় ঘোষণা পিছিয়ে দেন।

২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, সগিরা মোর্শেদের পরিবারের সঙ্গে আসামি শাহীনের বিভেদ তৈরি হয়েছিল। এছাড়া সগিরাকে অনেক অপছন্দ করতেন এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সগিরা-শাহীনেরও মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। সম্বোধন করা নিয়েও পারিবারিক দ্বন্দ্ব ছিল।

সগিরার কাজের মেয়েকে মারধর করে আসামি ডা. হাসান আলী চৌধুরী। এ নিয়ে পারিবারিক বৈঠকে শাহীন সগিরাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। আসামিরা নিজেদের বাসায় বসে সগিরাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ডা. হাসান আলী তার চেম্বারে অপর আসামি মারুফ রেজার সঙ্গে ২৫ হাজার টাকায় হত্যার চুক্তি করে। 

১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই মারুফ রেজা ও আনাস মাহমুদ সগিরাকে গুলি করে হত্যা করে। ওই ঘটনায় সগিরার স্বামী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালত সগিরা মোর্শেদের ভাশুরসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এর মধ্যদিয়ে দীর্ঘ ৩১ বছর পর এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হয়। এরপর গত বছরের ১১ জানুয়ারি মামলার বাদী ও সগিরা মোর্শেদের স্বামী আব্দুস সালাম চৌধুরী আদালতে সাক্ষ্য দেন। এর মাধ্যমে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মামলাটিতে ৫৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত।

এনআর/জেডএস