২৮ অক্টোবর বিএনপির মহা-সমাবেশকে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার হাফসা আক্তারের জামিন স্থগিতাদেশ তুলে নেননি চেম্বার আদালত। এ বিষয়ে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ২২ এপ্রিল দিন ধার্য করা হয়েছে।

বুধবার (৩ এপ্রিল) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম এ আদেশ দেন।

আদালতে হাফসা আক্তারের পক্ষে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।

শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, হাফসা আক্তারের দুই শিশু সন্তানের কল্যাণের কথা চিন্তা করে জামিন প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, হাফসা আক্তারের এক সন্তান নূরীর বয়স ৪ বছর। আরেক সন্তানের বয়স তার থেকে একটু বেশি। তাদের বাবাও পলাতক। শিশুদের দেখভাল করার কেউ নাই। এছাড়া যে মামলায় তিনি গ্রেপ্তার রয়েছেন সেটাতে পুলিশ চার, সাড়ে চার মাসেও চার্জশিট দেয়নি।

এ সময় আদালত বলেন, আপনাদের আবেদন আংশিক মঞ্জুর করে জামিন আবেদনের শুনানি আমরা এগিয়ে দিচ্ছি। আগামী ২২ এপ্রিল আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে বিষয়টি শুনানির জন্য থাকবে।

তখন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, শিশুদের কথা চিন্তা করে হাফসা আক্তারকে জামিন দিতে পারেন। অন্যথায় শিশুদেরও কারাগারে পাঠিয়ে দিন।

এরপর রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, হাফসা আক্তার যে ককটেল বিস্ফোরণ করেছে ভিডিও ফুটেজে তার প্রমাণ রয়েছে।

শুনানি শেষে আদালত আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ২২ এপ্রিল দিন ধার্য করেন।

গত ২৮ অক্টোবর মহা-সমাবেশকে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার মায়ের জন্য মানবন্ধনে কান্না করে আলোচনায় আসে শিশু নূরী। ওই শিশুর মা হাফসা আক্তারের জামিন স্থগিতাদেশ তুলে নিতে গত ৩১ মার্চ চেম্বার আদালতে আবেদন করা হয়। তার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এ আবেদন করেন।

গত ১০ মার্চ শিশু নূরীর মা হাফসা আক্তারের জামিন স্থগিত করেন চেম্বার আদালত। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের আদালত এ আদেশ দেন।

এরআগে ৬ মার্চ হাফসা আক্তারকে জামিন দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেন।

আদালতে সেদিন জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহিন আহমেদ খান।

এর আগে হাফসা আক্তারের জামিন চাইতে হাইকোর্টে আসে মায়ের মুক্তির জন্য মানববন্ধন করে আলোচনায় আসা চার বছরের শিশু নুরজাহান নূরী। গত ৪ মার্চ বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চে তার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হয়।

এর আগে গত বছরের ২৩ নভেম্বর পত্রিকায় ‘নূরীর কান্নার জবাব নাই’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, কেউ এসেছেন কোলের শিশু নিয়ে, কেউ এসেছেন অবুঝ সন্তান নিয়ে, আবার কেউ নাতি-নাতনি নিয়ে। বৃদ্ধ বাবা, মা, স্ত্রী, ভাই-বোনরাও এসেছেন। তাদের কারও চোখে পানি, কারও হাতে প্ল্যাকার্ড, কারও হাতে ব্যানার। প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে স্বজনদের মুক্তি দাবি করেছেন তারা। 

রাজধানীর পুরান ঢাকা থেকে দাদা-দাদির হাত ধরে আসে দুই অবুঝ শিশু বর্ষা ও নূরী। মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে কারাবন্দি মায়ের জন্য মুক্তি দাবি করে এই দুই শিশুকন্যা। শিশু বর্ষা মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলে, আমার মাকে ছেড়ে দেন। আমার পরীক্ষা। আমি মাকে ছাড়া স্কুলে যেতে পারি না।

এমএইচডি/এসএম