হেফাজত ইসলামের সদ্য বিলুপ্ত হওয়া কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে মোহাম্মদপুর থানার একটি মামলায় ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছিল পুলিশ। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের আপডেট জানাতে রোববার (২৫ এপ্রিল) সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুণ অর রশিদ।

সোমবার (২৬ এপ্রিল) মামুনুল হককে আরও ২ মামলায় ২০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে তোলা হয়। সেই রিমান্ড শুনানিতে সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টি ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী নজরে আনেন মামুনুলের আইনজীবী সৈয়দ জয়নাল আবেদীন মেজবাহ।

এসময় তিনি বলেন, ‘মাই লর্ড, অফিসাররা আজকাল তদন্ত ও রিমান্ডের অগ্রগতি সম্পর্কে টেলিভিশনে তথ্য দেওয়া শুরু করেছে। অথচ একটি মামলার তদন্তের অগ্রগতি একমাত্র তদন্ত কর্মকর্তা এবং জজ সাহেবের জানার কথা। এসব তথ্য তাদের কাছেই সীমাবদ্ধ থাকার কথা। এটা কোনো পুলিশ অফিসারের টেলিভিশনে দেখিয়ে সবাইকে জানানোর কথা না।’ তবে এ বিষয়ে আদালত তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেননি।

শুনানি শেষে মতিঝিল ও পল্টন থানার নাশকতার পৃথক দুই মামলায় ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

রোববারের সংবাদ সম্মেলনে ডিসি হারুন যা বলেছিলেন
মামুনুলের রিমান্ডে পাওয়া তথ্য নিয়ে ডিসি হারুণ অর রশিদ বলেছিলেন, মামুনুলের সঙ্গে পাকিস্তানের একটি জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল। এছাড়া সরকার উৎখাতে মামুনুল সব ধরনের পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি ২০০৫ সালে পাকিস্তানে যান। সেখান থেকে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা, অগ্নিসংযোগ ও সংহিংসতার ঘটনা ঘটান।

আমরা রিমান্ডের সাত দিন তার সঙ্গে কথা বলেছি। তার কাছ থেকে কিছু তথ্য পেয়েছি, কিছু বক্তব্য পেয়েছি। তার মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছি। মোবাইলের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। তার মোবাইলে বিকাশের মাধ্যমে কাতার, দুবাই, পাকিস্তান থেকে প্রচুর পরিমাণে টাকা এসেছে। মামুনুল বাবরি মসজিদের নাম বলেও টাকা এনেছেন। তিনি ভেবেছেন, মসজিদের নাম বললে অনেকে টাকা দেবেন। বিশেষ করে ভারত বিদ্বেষীরাও টাকা দেবেন। 

তিনি বলেন, এ টাকা দিয়ে তিনি উগ্র জঙ্গিবাদী কায়দায় বাংলাদেশের কয়েকটি মসজিদের ও মাদরাসার কিছু কিছু লোককে ম্যানেজ করেছেন এবং নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে তাকে যেন বিভিন্ন জায়গায় ওয়াজে ডাকা হয় সে ব্যবস্থা করেছেন।

নেয়ামতউল্লাহ ও মামুনুল হক একসঙ্গে ৪৫ দিনের বেশি সময় পাকিস্তানে ছিলেন। পাকিস্তানের একটি ধর্মীয় রাজনৈতিক সংগঠনকে মডেল ধরে বাংলাদেশে মওদুদি, সালাফি, হানাফির মতাদর্শের মানুষকে একত্রিত করেন তারা। পাশাপাশি বিএনপি-জামাতের সঙ্গে আঁতাত করেন। অপরদিকে বোন জামাইয়ের সঙ্গে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থাও যোগাযোগ করে। সব মিলিয়ে হেফাজতকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কাওমি মাদরাসার ধর্মভীরু মানুষকে প্রভাবিত করে সরকার উৎখাত করতে চেয়েছিলেন তিনি।

৮ বছরের তদন্তে ২০১৩ সালের নাশকতায় মামুনুলের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি
রিমান্ড শুনানিতে মামুনুলের আইনজীবী সৈয়দ জয়নাল আবেদীন মেজবাহ আদালতকে বলেন, ‘মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালে মামলা করা হয়েছিল। মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘শাপলা চত্বরের নাশকতায় অজস্র লোক মারা গেছে বলে জানা গেছে’। যখন একজন মামলার বাদী বলেন যে, ‘জানা গেছে’ তাহলে মামলার আর কোনো ভিত্তি থাকে?” 

তিনি বলেন, ৮ বছরের আগের মামলা এটি। গত ৮ বছর এ মামলায় মামুনুল হককে গ্রেফতার করা হয়নি। এমনকি তিনি এই মামলায় ‘পলাতক আছেন’ মর্মেও পুলিশ আদালতকে কিছু জানায়নি। তারপরেও ৮ বছর পর কেন তাকে গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে? আমরা তার জামিন প্রার্থনা করছি।

এসময় রাষ্ট্র পক্ষের শুনানিতে দায়রা জজ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল্লাহ আবু বলেন, মামুনুল হক বিএনপি এবং জামায়াতের সঙ্গে মিলে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছিলেন। তাকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন জানাচ্ছি। পরে আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এক ডিআইজির অনুরোধে পল্টনে গিয়ে মামলা খেলাম : মামুনুল
পল্টন থানার মামলায় ৪ দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়েছে মামুনুল হককে। এ মামলার শুনানিতে মামুনুলের পক্ষের আইনজীবী সৈয়দ জয়নাল আবেদীন মেজবাহ বলেন, ‘পল্টন থানার দায়ের করা মামলায় বাদী পক্ষের কোনো তথ্য ঠিক নেই। তিনি কোন হাসপাতালে ছিলেন তার কোনো তথ্য দেননি।’

এছাড়াও আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলেন মামুনুল হক। আদালতকে তিনি বলেন, 'গত ২৬ মার্চ আমি বাংলাবাজার মসজিদে পুলিশ প্রটেকশনে জুমার নামাজ পড়িয়েছি। নামাজ শেষে জানতে পারি বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিরা জড়ো হয়েছে। এরপর একজন ডিআইজির অনুরোধে বায়তুল মোকাররম মসজিদে যাই, সেখানে আমাকে বক্তব্য রাখতে বলা হয়। তারপর ওইখানে আমি বক্তব্য রাখি। আমিতো কোনো অন্যায় করিনি। ভবিষ্যতে পুলিশ অনুরোধ করলে আমরা তো কোথাও যেতে পারবো না।'

এসময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মামুনুলের বক্তব্যে বিষয়ে কোর্টকে বলেন, ‘মামুনুলের আইনজীবী কথা বলার পরে আবার তিনি এভাবে বক্তব্য দিতে পারেন না।’

তবে আদালত মামুনুলকে কথা বলতে বলেন। মামুনুল আবার বলেন, ‘আপনি (বিচারক) চাইলে আমার ওইদিনের কল রেকর্ড চেক করতে পারেন।’ পরে আদালত তার ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এআর/এসএম