ডেমরায় অছিম পরিবহনে আগুন দিয়ে জীবন্ত হেলপারকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম মনিরের গাড়িচালক মাহাবুবুর রহমান সোহাগ দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

এ মামলায় গ্রেপ্তার অপর দুই আসামি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম মনির ওরফে মনির মুন্সি এবং নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সদস্যসচিব মো. সাহেদ আহমেদের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর ঘটনার দায় স্বীকার করে স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে সম্মত হন সোহাগ। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাকিল আহম্মেদ তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

অপরদিকে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য মনির ও সাহেদকে দশ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে আদালত তাদের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আজ রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বানচালের উদ্দেশ্যে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টন এলাকায় নারকীয় তাণ্ডব চালায় বিএনপি।

এদিন প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করার মতো জঘন্য কাজসহ অসংখ্য গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটান দলটির নেতাকর্মীরা। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ অক্টোবর দিবাগত রাতে ডেমরা থানাধীন দেইল্লা বাস স্ট্যান্ডে রাখা অছিম পরিবহনের একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। এতে ওই বাসে ঘুমিয়ে থাকা হেলপার মো. নাইম (২২) ঘটনাস্থলে আগুনে পুড়ে মারা যান এবং অপর হেলপার মো. রবিউল (২৫) অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহত হন। এ ঘটনায় ২৯ অক্টোবর ডেমরা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের অ্যান্টি ইলিগাল আর্মস অ্যান্ড ক্যানাইন টিমে হস্তান্তর করা হয়।

তদন্তের প্রথমেই দুইজন ভুক্তভোগীর খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত মো. নাইমের (২২) বাড়ি বরিশালের কোতোয়ালি থানায়। নাইমের বাবার নাম আলম চৌকিদার এবং মায়ের নাম পারভীন বেগম। তারা ডেমরা এলাকাতেই থাকতেন। অভাবের সংসারে একটু সচ্ছলতা ফেরানোর জন্যই অল্প বয়সে কাজে নেমে পড়েন নাইম। অবশেষে বাসের ভেতর ঘুমন্ত অবস্থায় মারা যান তিনি। অপর ভুক্তভোগী মো. রবিউল (২৫) একই বাসে নাইমের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিলেন। আগুনের তাপে ঘুম ভেঙে যায় তার। কিন্তু ততক্ষণে রবিউলের শরীরেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। কোনোমতে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় গাড়ি থেকে তিনি বের হয়ে আসেন। পরে পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান।

এনআর/এসকেডি