আমার রুমমেট বহিরাগত, সে হলের কেউ না : আদালতকে ভিপি প্রার্থী জালাল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে স্বতন্ত্র ভিপি (সহ-সভাপতি) প্রার্থী জালাল আহমদ ওরফে জ্বালাময়ী জালালের রুমমেট অবৈধভাবে হলে ছিলেন। তাকেসহ অবৈধভাবে যারা হলে রয়েছেন তাদের হল ত্যাগ করাতে রিটের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন জালাল আহমেদ।
বুধবার (২৭ আগস্ট) রুমমেটকে হত্যাচেষ্টার মামলায় তাকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আসাদুল ইসলাম কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালতে এ বিষয়ে শুনানি হয়।
বিজ্ঞাপন
জালালের পক্ষে অ্যাডভোকেট জায়েদুর রহমান জামিন চেয়ে শুনানি করেন। তিনি আদালতকে বলেন, ‘ঢাবির হলগুলোতে অবৈধভাবে অবস্থানরতদের হল ত্যাগের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তার রুমমেটও অবৈধভাবে হলে থাকেন। এ বিষয় নিয়ে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। তার রুমমেট তাকে মারধর করে উল্টো তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। তার রিমান্ড আবেদন নাই। আর ভিকটিমের মেডিকেল সার্টিফিকেট নাই। জামিনের প্রার্থনা করছি। রাষ্ট্রপক্ষ তার জামিনের বিরোধীতা করেন।
উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত জালালের বক্তব্য শুনতে চান। জালাল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে তিনবার জেলে গিয়েছি। জেল ও আদালতে আসতে আসতে অভ্যস্ততা হয়ে গেছে। এখন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নেই, তারপরও আমাকে এখানে দাঁড়াতে হলো এতে অবাক হয়েছি। আমি কোটা আন্দোলনে অংশ নিয়েছি।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের রানিং স্টুডেন্ট। ঢাবির হলগুলোতে অনেকেই অবৈধভাবে অবস্থান করছেন। তাদের হল ত্যাগের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আমার রুমমেটেরও হল ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু তিনি যাননি। তাকে হলত্যাগ করতে হাইকোর্টে রিটের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। বিষয়টা সে জেনে যায়। সে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আগে আঘাত করে।
আরও পড়ুন
বিচারককে নিজের হাত দেখিয়ে জালাল বলেন, আমাকে মারতে গেলে ধরে ফেলি। হাতে আঘাত পাই। বলা হচ্ছে, আমি তাকে ছুরিকাঘাত করেছি। মেডিকেল টেস্ট দিন, কে কাকে আঘাত করেছে সেটা বের হবে। দেখেন কী হয়। আমার রুমমেট বহিরাগত। সে হলের কেউ না। এসময় বিচারক তার কাছে জানতে চান তিনি স্বতন্ত্রপ্রার্থী কি না?
উত্তরে হ্যাঁ জবাব দেন জালাল। এসময় তার আইনজীবীরা যেকোনো শর্তে তার জামিন চান। তার পাসপোর্ট জমা নেওয়ার কথা বলে আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, তিনি জামিনে গেলে পলাতক হবেন না। সামনে তার নির্বাচন। এসময় জালাল আহমদও আদালতকে আর্জি জানান যেকোনো শর্তে তাকে যেন জামিন দেওয়া হয়। পরে আদালত বলেন, এখন সবার চোখ ডাকসুর দিকে। ওটা সেকেন্ড পার্লামেন্ট।
পরে আদালত তার জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এদিকে জালাল আহমদকে আটক রাখার আবেদনে বলা হয়েছে, জালাল আহমদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী মো. রবিউল হক মিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ৪৬২ নম্বর রুমে থেকে লেখাপড়া করতেন। জালাল আহমদ সিনিয়র শিক্ষার্থী হওয়ায় বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থী মো. রবিউল হককে হলের রুমের ভেতর নানাভাবে মারপিট করতো এবং বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিতেন। মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে রবিউল হক রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে জালাল আহমদ রুমের ভেতরে প্রবেশ করে বৈদ্যুতিক লাইট জ্বালায় এবং চেয়ার টানা হেচড়া করে বিকট শব্দ করতে শুরু করেন। যার ফলে রবিউলের ঘুম ভেঙে যায়। সে জালাল আহমেদ কে বলেন, ভাই সকালে আমি লাইব্রেরিতে যাবো। আপনি একটু আস্তে শব্দ করেন। এতে আসামি জালাল আহমদ ক্ষিপ্ত হয়ে রবিউলের সঙ্গে তর্কবির্তক শুরু করে। তর্কবির্তকের একপর্যায়ে জালাল আহমেদ রবিউলকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে কাঠের চেয়ার দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। এতে তার কপালে জখম হয়।
পরবর্তী সময়ে জালাল আহমেদ রুমের ভেতর থাকা পুরাতন টিউব লাইট দিয়ে রবিউলকে হত্যার উদ্দেশ্যে পুনরায় মাথা লক্ষ্য করে আঘাত করে। সে মাথা সরিয়ে নিলে টিউব লাইটের আঘাত তার বুকের বাম পাশে লেগে টিউব লাইট ভেঙে গুরুতর কাটা রক্তাক্ত জখম হয়। পরে অন্যান্য রুমের শিক্ষার্থীরা রবিউলকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন আসামি। আসামির নাম-ঠিকানা যাচাই বাছাই প্রক্রিয়াধীন। মামলার ঘটনার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং চাঞ্চল্যকর। এমতাবস্থায় তদন্তকালীন সময় তাকে জামিনে মুক্তি দিলে চিরতরে পলাতক হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তদন্তের ব্যাঘাত ঘটবে। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং আসামির নাম-ঠিকানা যাচাই না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে জেল হাজতে আটক রাখা একান্ত প্রয়োজন।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের ৪৬২ নম্বর রুমে রবিউল হক নামে এক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করেন ডাকসুর ভিপি প্রার্থী জালাল আহমদ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে চলমান বাগবিতণ্ডার জেরে রুমমেট রবিউলকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন জালাল আহমদ। আহত রবিউল এখন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন।
চিকিৎসাধীন রবিউল হক বলেন, রাত সাড়ে ১২টার দিকে জালাল রুমে এসে লাইট অন করে এবং শব্দ করতে থাকে। এতে আমার ঘুম ভেঙে যায়। তখন আমি বলি, সকালে আমাকে লাইব্রেরিতে যেতে হবে অযথা শব্দ করবে না, ঘুমে সমস্যা হচ্ছে। এতে সে রেগে গিয়ে আমাকে অবৈধ ও বহিরাগত বলে। আমি প্রতিবাদ করলে আমাকে আঘাত করা শুরু করে। আমি কোনোরকমে নিজেকে রক্ষা করি।
রাত ১টার দিকে হল প্রাধ্যক্ষ ড. মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের নৃশংস কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে (জালাল) হল থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। তার ছাত্রত্ব বাতিলেরও ব্যবস্থা করা হবে।
এ ঘটনায় ড. সিরাজুল বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন।
এনআর/এসএম