প্রথমে কোটা সংস্কারের আন্দোলন। পরে তা ধীরে ধীরে রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে। চব্বিশের জুলাই-আগস্টের এ আন্দোলন দমনে বেশ তৎপর ছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। ছাত্র-জনতার কর্মসূচি বানচালে গত বছরের ১৯ জুলাই থেকে প্রায় প্রতি রাতেই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় বসতো কোর কমিটির বৈঠক। এর মধ্যে একটি বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের আটকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাদের তুলে আনার সেই প্রস্তাবটি আসে ডিজিএফআই থেকে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাজসাক্ষীর জবানবন্দিতে এমন বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল। জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে ৩৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে আজ মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সাক্ষ্য দেন সাবেক এই পুলিশপ্রধান।

সাক্ষীর ডায়াসে দাঁড়িয়ে মামুন বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলন দমনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় ১৯ জুলাই থেকে নিয়মিত কোর কমিটির বৈঠক হতো। আমি কোর কমিটির সদস্য হিসেবে উপস্থিত থাকতাম। সেখানে স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাঙ্গীর, অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক) টিপু সুলতান, অতিরিক্ত সচিব রেজা মোস্তাফা, এসবিপ্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিবিপ্রধান হারুনুর রশিদ, র‍্যাবের ডিজি ব্যারিস্টার হারুনুর রশিদ, ডিএমপি কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান, বিজিপির ডিজি মেজর জেনারেল আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকি, আনসারের ডিজি মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক, এনটিএমসির ডিজি মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান ও ডিজিএফআইয়ের প্রধান উপস্থিত থাকতেন। বৈঠকে আন্দোলন দমন থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতো।

তিনি বলেন, কোর কমিটির সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ডিজিএফআই ও ডিবিপ্রধান হারুনুর রশিদকে আটকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে সমন্বয়কদের আটক করে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়। সেখানেই সরকারের সঙ্গে আপস করতে বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতনসহ চাপ দেওয়া হয়। নিয়ে আসা হয় তাদের আত্মীয়-স্বজনকেও। এছাড়া সমন্বয়কদের আন্দোলন প্রত্যাহারের জন্য টেলিভিশনে বিবৃতি দিতে বাধ্য করা হয়।

রাজসাক্ষী মামুন বলেন, কোর কমিটির বৈঠকে তাদের আটকের বিষয়ে আমি বিরোধিতা করি। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের আটক করা হয়। ডিবিপ্রধান হারুনুর রশিদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান কামালের গভীর সম্পর্ক ছিল। তিনি হারুনকে জিন নামে ডাকতেন। তাকে খুব কর্মতৎপর ও সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে রাজনৈতিকভাবে খুব কার্যকর মনে করতেন তিনি।

ট্রাইব্যুনালে আজ প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, মঈনুল করিম, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যরা।

এমজে