টঙ্গীতে ম্যানহোলে পড়ে জ্যোতির মৃত্যু: ৯০ দিনের মধ্যে তদন্তের নির্দেশ
গাজীপুরের টঙ্গীতে ম্যানহোলে পড়ে ফারিয়া তাছনিম জ্যোতি (৩২) নামে এক নারীর মৃত্যুর ঘটনা ৯০ দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টে। স্থানীয় সরকার সচিব, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক, গাজীপুর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ, সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীকে এই প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
জনস্বার্থে ব্লাস্টের দায়ের করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে বুধবার (৩ সেপ্টম্বর) বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি ফয়েজ আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
বিজ্ঞাপন
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আনিতা গাজী রহমান, ব্যারিস্টার জয়দীপ্তা দেব চৌধুরী। অপরপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খান জিয়াউর রহমান।
আদালত রুলে টঙ্গীর ওই ড্রেনটি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং এ ঘটনার জন্য দায়ী সব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক এবং আইনি ব্যবস্থা কেন গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দ্রুততার সঙ্গে দেশের সব খোলা ড্রেন এবং ম্যানহোলের ঢাকনার ব্যবস্থা করা এবং দৃশ্যমান স্থানে সতর্কতামূলক চিহ্ন স্থাপন করা, তদন্তের ফলাফল এবং গৃহীত পদক্ষেপসমূহ জনসমক্ষে কেন প্রকাশ করা হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
বিজ্ঞাপন
এ ছাড়া, রুলে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে স্থানীয় সরকার এবং মহাসড়ক কর্তৃপক্ষকে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। চার সপ্তাহের মধ্যে স্থানীয় সরকার সচিব, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক, গাজী সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ, সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
ব্যারিস্টার আনিতা গাজী রহমান সাংবাদিকদের বলেন, গত ২৭ জুলাই গাজীপুরের টঙ্গীতে ম্যানহোলে পড়ে ফারিয়া তাছনিম জ্যোতি (৩২) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়। ওই মৃত্যুর ঘটনায় একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ২৯ জুলাই গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘৩৭ ঘণ্টা রুদ্ধশ্বাস অভিযান, ম্যানহোলে পড়ে নিখোঁজ তাছনিমের মরদেহ মিলল বিলে' শিরোনামে সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, গত ২৭ জুলাই রাত ৮টা ১০ মিনিটে ফারিয়া তাছনিম জ্যোতি (৩২) নামে একজন নারী গাজীপুর জেলার টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সংলগ্ন ইম্পেরিয়াল আই কেয়ার হসপিটাল এবং ঢাকা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সামনে একটি খোলা ম্যানহোলে পড়ে যান। ৩৭ ঘণ্টা পর ঘটনাস্থল থেকে ২-৩ কিলোমিটার দূরে টঙ্গীর শালিকচূড়া বিলের কচুরিপানা থেকে ওই নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানতে পারে যে, এই ম্যানহোলগুলো দীর্ঘদিন ধরে খোলা অবস্থায় পড়ে আছে এবং সেগুলোর আশপাশে কোনো ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনী বা সতর্কীকরণ চিহ্ন নেই। একই স্থানে ইতোপূর্বে আরও একজন নারী পড়েছিলেন, যাকে স্থানীয় জনগণ দ্রুত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিল। ড্রেনের ম্যানহোলগুলোর সংস্কার করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থার গাফিলতি ও সমন্বয়হীনতার অভাব লক্ষ করা গেছে। এ ছাড়াও জনরোষের কারণে উদ্ধার কাজও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
এরপর গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) সম্প্রতি হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট দায়ের করে। রিটে স্থানীয় সরকার সচিব, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক, গাজী সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ, সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে আজ আদালত রুলসহ ওই ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
এমএইচডি/এমজে