গুমের মামলা
বিশেষ বন্দিদের নাম ছিল মোনালিসা, আয়নাঘরকে বলা হতো আর্ট গ্যালারি
২০০৯ থেকে ২০২৪। এ সময়জুড়ে দেশ শাসনে ছিল আওয়ামী লীগ সরকার। আর এ শাসনামলে গুমের শিকার হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার পতনের পর কেউ জীবিত ফিরেছেন আবার কারও খোঁজ এখনও মেলেনি। এমনকি অনেকের লাশের হদিসও পাননি স্বজনরা। ভিন্ন মত-পথের কিংবা রাজনৈতিক মতাবলম্বীদের তুলে নিতেন বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা।
গুম হওয়া এসব ব্যক্তিকে রাখা হতো আয়নাঘর হিসেবে পরিচিত গোপন বন্দিশালায়। সেখানেই চালানো হতো নৃশংসতা। কিন্তু বন্দিদের নিজের নামে ডাকা হতো না। ছিল আলাদা কোডনেম। আর বিশেষ বন্দিদের নাম ছিল মোনালিসা। এমনকি আয়নাঘরকে বলা হতো আর্ট গ্যালারি।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (৮ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ গুমের শিকার ব্যক্তিদের সেসব ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
ট্রাইব্যুনালকে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তির হাত কাটাসহ নখ উপড়ে ফেলা, ঘুর্ণায়মান চেয়ারে বসিয়ে বা ইলেকট্রনিক শক দিয়ে ভয়ংকর সব নির্যাতন করা হতো। তাদের আলাদা কোড নেম ছিল। বিশেষ বন্দিদের ডাকা হতো মোনালিসা নামে। আর গুমঘরকে বলা হতো আর্ট গ্যালারি। পরবর্তী সময়ে আয়নাঘর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে এ নাম।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, হাসপাতাল বা ক্লিনিক নামেও ডাকা হতো র্যাবসহ বিশেষ বাহিনীর এসব বন্দিশালাকে। আর গুমের শিকার ভুক্তভোগীদের বলা হতো সাবজেক্ট।
আরও পড়ুন
এদিন আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গুমের মাধ্যমে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক দুই মামলায় প্রসিকিউশনের দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-১। দুই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩০ জনকে আসামি করা হয়। তাদের সবার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিসহ আগামী ২২ অক্টোবরের মধ্যে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পরে প্রেস ব্রিফিংয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, নতুন বাংলাদেশে ভয় ও দমননীতির যুগ শেষ। বিচার করার সময় কখনোই দেখা হয় না অপরাধী কত উঁচু স্তরের, কত ক্ষমতাশালী অথবা কোন ব্যক্তি। অপরাধের দায় কেবলমাত্র ব্যক্তিদেরই। তাদের অপরাধের দায় রাষ্ট্র-সমাজ বা প্রতিষ্ঠান বহন করবে না।
তিনি আরও বলেন, গুমের দুই মামলায় আমরা যেমন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, আইজিপি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আসামি করেছি, তেমনি বিভিন্ন বাহিনীতে যারা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জনগণের আস্থা জনগণের বেতন নিয়ে আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে অপরাধ করেছিলেন, তাদেরও করা হয়েছে। অপরাধের দায় কেবলমাত্র এই ব্যক্তিদেরই। তাদের অপরাধের দায় রাষ্ট্র-সমাজ বা প্রতিষ্ঠান বহন করবে না। আজ যারা আসামি শ্রেণিভুক্ত হয়েছেন, আমরা স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই তারা যে বাহিনীর সদস্যই হন না কেন সেই বাহিনীগুলো কোনো অবস্থাতেই আসামি নয়। আসামি হচ্ছেন এই ব্যক্তিরা।
এমআরআর/এমজে