বিএনপিকর্মী হত্যা মামলায় ইরেশ যাকেরকে অব্যাহতির সুপারিশ
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন রাজধানীর মিরপুরে গুলিতে বিএনপিকর্মী মাহফুজ আলম শ্রাবণ হত্যার অভিযোগে করা মামলায় এজাহারনামীয় আসামি অভিনেতা ইরেশ যাকেরকে অব্যাহতির সুপারিশ করে অন্তর্বর্তী তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। গত ৯ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক সাজ্জাদ রোমন এ প্রতিবেদন দাখিল করেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) আদালত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ মামলার আরেক আসামি ফোরথর্ট পিআর (কনসার্ন অব এশিয়াটিক) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকরাম মঈন চৌধুরীকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।
বিজ্ঞাপন
অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরেশ জাকের ও ইকরাম মঈন চৌধুরী ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বেলা আড়াইটার দিকে মামলার ঘটনাস্থল উপস্থিত ছিল মর্মে কোনো প্রত্যক্ষদর্শী এবং সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। তারা ওইদিন ওই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিতির স্থিরচিত্র বা কোনো ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যায়নি। এছাড়া তারা মামলার ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে মামলার ঘটনা সংঘটিত করেছিল মর্মে কোনো তথ্যবহুল দালিলিক সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি বিধায় তাদের বিরুদ্ধে আনা অপরাধের দায় থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি প্রদান করা যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। ভবিষ্যতে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে প্রামাণ্য দালিলিক এবং বাস্তবভিত্তিক কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া গেলে বিধি মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, নিহতের ভাই মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পী গত ২০ এপ্রিল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেন। ওইদিন আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করে অভিযোগটি মিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জকে নিয়মিত মামলা হিসেবে নেওয়ার নির্দেশ দেন।
বিজ্ঞাপন
মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪০৮ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাবেক এমপি-মন্ত্রী, ঢাকার সাবেক দুই মেয়র, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, নির্বাচন কমিশনার, আইনজীবীসহ ৪০৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলাটিতে অভিনেতা ইরেশ যাকের ১৫৭ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি।
মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, আমার ছোট ভাই মাহফুজ আলম শ্রাবণ (২১) বিএনপিকর্মী। সে রেনেটা কোম্পানিতে ক্যাজুয়াল হিসেবে অনুমান ৬ মাস যাবৎ চাকরিতে নিয়োজিত ছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরুর পর থেকে বিভিন্ন সময় আমার ভাই ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে ছাত্রদের পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিত। ঘটনার দিন গত ৫ আগস্ট দুপুরে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা সরকারের চূড়ান্ত পতনের লক্ষ্যে বেলা আড়াইটার সময় ছাত্র জনতার মিছিল মিরপুর মডেল থানাধীন মিরপুর শপিং কমপ্লেক্স ও মিরপুর মডেল থানার মধ্যবর্তী রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে যাওয়ার সময় আসামিদের নির্দেশে তাদের দলীয় আরও পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী একত্রে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিলকারী ছাত্র-জনতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে অতর্কিত আক্রমণ চালায়। তারা সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার সেল, রাবার বুলেট, রাইফেল, শট গান, পিস্তলের গুলি বর্ষন এবং ককটেল ও হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। সংঘবদ্ধ আসামিদের গুলি বর্ষণের ফলে আমার ভাই মাহফুজ আলম শ্রাবণের বুকের বাম পাশে গুলিবিদ্ধ হয়, যা ডান পাশের কোমর ছিদ্র হয়ে বের হয়ে যায়। গুলির আঘাতে আমার ছোট ভাই তাৎক্ষণিক রক্তাক্ত অবস্থায় মিরপুর মডেল থানার প্রধান গেটের সামনে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে। আমার ভাইসহ অনেকেই ঘটনাস্থলে আসামিদের নিক্ষিপ্ত গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়। তখন সেখানে উপস্থিত ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ আমার ভাইকে চিকিৎসার জন্য রিকশায় করে মিরপুরের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এনআর/এসএম