মালয়েশিয়ায় ‘জঙ্গি সন্দেহে’ গ্রেপ্তার চারজন রিমান্ডে
মালয়েশিয়ায় জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বিমানবন্দর থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার চার আসামির ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রোববার (২৬ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল ওয়াহাবের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। রিমান্ড যাওয়া আসামিরা হলেন- মহিউদ্দিন, সাব্বির হোসাইন, মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ও রায়হান আহম্মেদ।
বিজ্ঞাপন
গত ২৬ সেপ্টেম্বর আসামিরা মালয়েশিয়া থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এলে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের আটক করে বিমানবন্দর থানায় সোপর্দ করে। ওইদিন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক কে এম তারিকুল ইসলাম আসামিদের আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। তবে মামলার মূল নথি না থাকায় ওইদিন তাদের রিমান্ড শুনানি হয়নি। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একইসঙ্গে রিমান্ড শুনানির জন্য আজ দিন ধার্য করা হয়।
এদিন রিমান্ড শুনানির জন্য তাদের আদালতে হাজির করা হয়। আসামিপক্ষের আইনজীবী গোলাম সারওয়ার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে বিচারক প্রত্যেকের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বিজ্ঞাপন
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় তারা পরস্পর যোগসাজশে আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছে। ওই গোষ্ঠীর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করে তারা দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় অবস্থান করে। সেখানে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করে। মালয়েশিয়ার আইপি ঠিকানা ব্যবহার করে বাংলাদেশি কতিপয় নাগরিকদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সদস্য সংগ্রহ এবং প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে।
গোয়েন্দা তথ্য থেকে জানা যায়, উক্ত সংগঠনের প্রচার, বায়াত বা আনুগত্যের শপথ পরিচালনা এবং ধর্মীয় আলোচনা ও গোপন বৈঠকের মতো কার্যক্রম আয়োজন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করতো। আসামিরা সন্ত্রাসী সংগঠনের হয়ে আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী স্বেচ্ছায় অনুদানের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করতো এবং সংগৃহীত অর্থ ই-ওয়ালেট এবং আন্তর্জাতিক অর্থ স্থানান্তর পরিষেবার মাধ্যমে অন্যান্য দেশে পাঠাতো। তারা সন্ত্রাসী সংগঠনটির সদস্য হিসেবে বছরে ৫০০ রিঙ্গিত চাঁদা দিত। এছাড়াও নতুন সদস্য সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম ব্যবহার করেছে। আসামিরা বাংলাদেশে এসে সন্ত্রাসবাদে জড়িত হয়ে উগ্রবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করে। তারা বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সংহতি, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, জননিরাপত্তা, জনসাধারণ বা জনসাধারণের মধ্য আতঙ্ক সৃষ্টিসহ যেকোনো সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী হামলা করতে পারে।
তারা বৈধপথে মালয়েশিয়া গিয়ে সেখানকার জননিরাপত্তা, জনসাধারণ বা জনসাধারণের কোনও অংশে আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ সংগঠনের কার্যক্রমের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করে। সেই দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, উগ্রবাদী কনটেন্ট আদান-প্রদান, উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমে যুক্ত থেকে এবং উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অর্থ সংগ্রহ করে সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ (সংশোধনী/২০১৩) এর ৬(৩)/৭(৩)/১০/১৩ ধারার অপরাধ করেছে মর্মে প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়া যায়। মামলাটি তদন্তাধীন। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।
এর আগে, মালয়েশিয়ায় জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ৩৫ প্রবাসীর বিরুদ্ধে ঢাকার বিমানবন্দর থানায় অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের পুলিশ পরিদর্শক মো. আব্দুল বাতেন বাদী হয়ে গত ৫ জুলাই এ মামলা করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। তারা মালয়েশিয়ায় অবস্থান করা সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। তারা মালয়েশিয়ার আইপি ঠিকানা ব্যবহার করে বাংলাদেশি কতিপয় নাগরিকদের পরিচালিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহ এবং প্রচার-প্ররোচনা চালিয়ে আসছিল। আসামিরা মালয়েশিয়ায় অবস্থান করে সেদেশের জননিরাপত্তা, জনসাধারণের আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করে। পরে গত ২৮ এপ্রিল থেকে ২১ জুন পর্যন্ত মালয়েশিয়ান পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। আসামিরা সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য হয়ে আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী স্বেচ্ছায় দেওয়া অনুদানের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করেন। পরে সংগৃহীত অর্থ ই-ওয়ালেট এবং আন্তর্জাতিক অর্থ স্থানান্তর পরিষেবার মাধ্যমে অন্যান্য দেশে অর্থ প্রেরণ করে। সংগঠনটির সদস্য হিসেবে বছরে ৫০০ রিঙ্গিত চাঁদা প্রদান করতো।
অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার আসামিদের মালয়েশিয়ান পুলিশ পর্যায়ক্রমে নিজ দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। গোয়েন্দা তথ্য বলছে, আসামিরা পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশে এসে সন্ত্রাসবাদে জড়িত হয়ে উগ্রবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করে দেশের অখণ্ডতা, সংহতি, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, জননিরাপত্তা, জনসাধারণের কোনো অংশে আতঙ্ক সৃষ্টি উদ্দেশ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করে যে কোনো সময় বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলার সম্ভাবনা রয়েছে।
এনআর/জেডএস