চানখারপুলে ছয় হত্যা মামলায় সাফাই সাক্ষ্য ৮ ডিসেম্বর
শেখ হাসিনার পতনের দিন চব্বিশের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাফাই সাক্ষ্যের জন্য আগামী ৮ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
রোববার (৩০ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ দিন নির্ধারণ করেন। অন্য সদস্য হলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
বিজ্ঞাপন
ট্রাইব্যুনালে আজ প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, প্রসিকিউটর তারেক আবদুল্লাহ ও সহিদুল ইসলাম।
এদিন শাহবাগ থানার তৎকালীন ওসি (অপারেশন) মো. আরশাদ হোসেনের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য নেওয়ার আবেদনের ওপর শুনানি করেন আইনজীবী সাদ্দাম হোসেন অভি। পরে তার আবেদন মঞ্জুর করে তিনজন সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়ার অনুমতি দেন ট্রাইব্যুনাল। গত ২৭ নভেম্বর এ আবেদন করেন আরশাদের আইনজীবী।
বিজ্ঞাপন
ওইদিন এ মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট আসামির বিরুদ্ধে মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলামের জেরা শেষ করেন স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। গত ১৯ নভেম্বর টানা তৃতীয় দিনের মতো তার সাক্ষ্য সম্পন্ন হয়। ১২ নভেম্বর শুরু হয় তার জবানবন্দি। সাক্ষ্যে গত বছরের ৫ আগস্ট চানখারপুলে ছয়জনকে হত্যার পেছনে নিজের করা তদন্তের আদ্যোপান্ত উপস্থাপন করেন তিনি। জব্দ করা সব তথ্যপ্রমাণাদি নিয়েও বর্ণনা দেন। এরপর জেরা শুরু করেন স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। টানা তিনদিনের জেরা শেষ হয় আজ। সবমিলিয়ে ২৩ কার্যদিবসে ২৬ সাক্ষীর সাক্ষ্য-জেরা সম্পন্ন হয়।
এ মামলার গ্রেপ্তার চার আসামি হলেন- শাহবাগ থানার সাবেক ওসি (অপারেশন) মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন ও মো. নাসিরুল ইসলাম।
পলাতক আসামিরা হলেন- সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল।
এর আগে, গত ১২ নভেম্বর ২৫ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন কামরুল হাসান। তিনি জব্দতালিকার সাক্ষী। গত ৯ নভেম্বর সাক্ষ্য দেন বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা। জবানবন্দি শেষে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফজলে নূর তাপসের দুটি ফোনালাপ বাজিয়ে শোনানো হয় ট্রাইব্যুনালে। একই দিন ২৩ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন মাসুদ রানা।
প্রসিকিউশন জানায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ছাত্র-জনতার ওপর যে মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, এর ফলশ্রুতিতে ৫ আগস্ট চানখারপুল এলাকায় ছয়জন নিহত হন। এছাড়া তদন্তকালে তদন্ত সংস্থা যে প্রতিবেদন দিয়েছিল, এতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৫০-এর বেশি সদস্য নিয়োজিত ছিলেন। তাদের বেশিরভাগই গুলিবর্ষণ করেছিলেন। এর মধ্যে এ মামলায় মাত্র তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। কারণ তারা লেথাল ওয়েপন ব্যবহার করেছেন।
গত ১৪ জুলাই চানখারপুলের মামলাটির পলাতক চার আসামিসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চানখারপুল এলাকায় শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে গুলি চালায় পুলিশ। এতে বহু হতাহতের ঘটনার পাশাপাশি শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরিক নিহত হন।
এমআরআর/জেডএস