চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে রাজধানীর চানখারপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে যুক্তি, পাল্টা যুক্তি খণ্ডন শেষ হয়েছে। এ মামলায় রায় ঘোষণার জন্য আগামী ২০ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

এদিন ইমাজ হোসেন ইমনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করের আইনজীবী মো. জিয়াউর রশিদ। পরে পলাতক চার আসামির হয়ে যুক্তি তুলে ধরেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী কুতুবউদ্দিন আহমেদ।

প্রসিকিউশনের পক্ষে পাল্টা যুক্তি খণ্ডন করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর সহিদুল ইসলাম, আবদুল্লাহ আল নোমানসহ অন্যরা।

এর আগে, ২২ ডিসেম্বর আংশিক যুক্তিতর্ক শেষ করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। বাকি শুনানির জন্য আজকের দিন নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনাল। ওই দিন যুক্তি উপস্থাপন করেন শাহবাগ থানার তৎকালীন পরিদর্শক (অপারেশন) মো. আরশাদ হোসেনের আইনজীবী সাদ্দাম হোসেন অভি। এরপর কনস্টেবল সুজন ও নাসিরুলের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবী সিফাত মাহমুদ শুভ ও আবুল হাসান। যুক্তিতর্কে নিজেদের ক্লায়েন্টের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ আনতে পারেনি বলে জানিয়েছেন তারা।

এ মামলার গ্রেপ্তার চার আসামি হলেন- শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক (অপারেশন) মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন ‍ও মো. নাসিরুল ইসলাম। কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের আজ সকালে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ।

পলাতকরা হলেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল। চলতি বছরের ১৪ জুলাই আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

এর আগে, ১৫ ডিসেম্বর প্রসিকিউশনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। তিনি এ মামলার আদ্যোপান্তসহ গত বছরের ৫ আগস্ট চানখারপুলের ঘটনায় আসামিদের কে কোন অপরাধ করেছেন, কার কতটুকু সংশ্লিষ্টতা ছিল; সব তুলে ধরেন। ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানের সরাসরি নির্দেশে ছয়জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। সবশেষ আট আসামির সর্বোচ্চ সাজা চেয়ে ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রার্থনা করেন এই প্রসিকিউটর।

১০ ডিসেম্বর এ মামলার আসামি আরশাদ হোসেনের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন জুয়েল মাহমুদ। ৮ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে নিজের পক্ষে নিজেই সাফাই সাক্ষ্য দেন আরশাদ হোসেন। একই দিন জবানবন্দি দিয়েছেন মো. সোলাইমান। ৩০ নভেম্বর আরশাদ হোসেনের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য নেওয়ার আবেদনের ওপর শুনানি করেন আইনজীবী অভি। পরে তার আবেদন মঞ্জুর করে তিনজন সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়ার অনুমতি দেন ট্রাইব্যুনাল। ২৭ নভেম্বর এ আবেদন করেন তিনি।

একই দিন এ মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলামের জেরা শেষ করেন স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। ১৯ নভেম্বর টানা তৃতীয় দিনের মতো তার সাক্ষ্য শেষ হয়। জবানবন্দি শুরু হয় ১২ নভেম্বর। সবমিলিয়ে ২৩ কার্যদিবসে ২৬ জনের সাক্ষ্য-জেরা সম্পন্ন হয়।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চানখারপুল এলাকায় শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে গুলি চালায় পুলিশ। এতে বহু হতাহতের ঘটনার পাশাপাশি শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরিক নিহত হন।

এমআরআর/এমএন